জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ১৫ দিনের মাথায় ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বর্ষার আইনজীবী মাহমুদুল হাসান শহীদ জামিন আবেদনে উল্লেখ করেছেন, আসামি বর্ষা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ অহেতুক হয়রানি করার জন্য গত ২১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করে। আসামির বিরুদ্ধে এজহারে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। আসামি একজন কোমলমতী শিক্ষার্থী এবং কিশোরী। তাকে জামিন দিন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
এদিকে জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা চৌধুরী সুমন বলেন, এ আসামি হত্যা মামলার আসামি। নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাকে জামিন দেওয়ার কোনো কারণ নেই। জামিন পেলে পলাতক হবেন। তার জামিনের ঘোর বিরোধিতা করছি।
এরআগে গত ২১ অক্টোবর বর্ষাসহ তিন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি দুই আসামি হলেন বর্ষার প্রেমিক মো. মাহির রহমান ও মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ ছাড়া এ মামলায় ওইদিন প্রীতম নামে আরেকজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।
এ ঘটনায় পুলিশ জানিয়েছে, মাহিরের সঙ্গে বর্ষার দেড় বছর আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক। জোবায়েদ প্রায় এক বছর আগে থেকে বর্ষাকে টিউশন করান। এরই একপর্যায়ে শিক্ষকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এতে করে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ তৈরি হয়। ঘটনার এক মাস আগে মাহির জানতে পারেন জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারেননি এবং বর্ষাও মাহিরকে বলেন, স্যারকে তুমি মেরে ফেল, আমি আর স্যারকে সহ্য করতে পারছি না।
এ বিষয়ে মাহির ও বর্ষা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করেন। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসেন এবং কখন চলে যান নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানান। মাহির তার বন্ধু আয়লানের সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনা করে আগানগর বউ বাজার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।
এর আগে ২১ অক্টোবর জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে রাজধানীর বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মো. জোবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। প্রতিদিনের মতো তিনি ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় পড়ানোর জন্য যান। একই তারিখে সন্ধ্যা প্রায় ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসাইনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, জোবায়েদ স্যার খুন হয়ে গেছে, কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।
এ বিষয়টি ওইদিন রাত আনুমানিক ৭টার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ভুক্তভোগী জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানান। পরে এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ওই ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় তিনি সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের ৩য় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে গেলে সিঁড়ির ওপর জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।