Image description

বেসরকারি চাকরিজীবী উৎপল বাবুর বেতন বাড়েনি গত ২ বছর। কিন্তু বাড়িভাড়া, নিত্যপণ্যের দাম থেমে নেই। তাই বাজারে এসে তার হিমশিম অবস্থা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানীর এই বাসিন্দা বলেন, ‘আগে দু–একটা ভালো জিনিস খেতে বাহিরে যেতাম। মুরগি খেতাম মাসে একটা বা দুইটা, এখন আমি সেটা খেতে পারি না। আগে আমার ডিমের চাহিদা ছিল মাসে ৩০টা বা ৪০টা। এখন আমি ২০টা করে আনছি।’

গত তিন বছর দেশে প্রতিমাসে মূল্যস্ফীতির তুলনায় পিছিয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার। এতে প্রকৃত আয় কমায় জীবনধারণে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পরিকল্পনা উপদেষ্টাও স্বীকার করছেন, খাদ্যের উচ্চ-মূল্যস্ফীতির চাপে আছে নির্ধারিত আয়ের মানুষ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদায়ী সরকারের পথে হাঁটায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান সরকারও।  

মূল্যস্ফীতির প্রভাবে মধ্যবিত্তেরই যেখানে নাকাল অবস্থায়, সেখানে নির্ধারিত নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট ভিন্ন মাত্রার। ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি না থাকায় করতে হচ্ছে ধারকর্যও।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘এই মাসে যে স্যালারি পেয়েছি, সেটার সাথে ধার মিলিয়েও টানাটানি করে চলে। প্রত্যেক মাসেই ধার করে চলতে হয়।’ 

শীতকালে সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে ডাল, ডিম, তেল, চিনি, চালসহ প্রায় সবধরনের নিত্যপণ্যের দামেই অস্বস্তি। বিক্রেতারা বলছেন, ৩ বছরের ব্যবধানে ৫০ ভাগ পর্যন্ত দাম বেড়েছে বেশিরভাগ পণ্যের।

একজন বিক্রেতা বলেন, ‘‍নিত্যপণ্য যত আছে সবগুলোই প্রায় ৪০–৪৫ শতাংশ হারে দাম বেড়েছে।’ 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারির পর থেকে ২০২৪ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো মাসেই মজুরি মূল্যস্ফীতিকে পেছনে ফেলতে পারেনি। বিদায়ী মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৯২ ভাগ। মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১৪ ভাগ। 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি এখনও বেশি। ১২ বা ১৩ শতাংশের মতো। যাদের নির্দিষ্ট আয় তাদের তো কষ্ট হয়ই।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেবল সুদহার বৃদ্ধি, আমদানি শুল্ক কমানো যথেষ্ট নয়। তাদের মতে, সরবরাহ ব্যবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার এখনো মূল সমস্যা শনাক্ত করতে পারেনি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা কমিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রকারান্তরে আসলে ব্যর্থ হয়েছে। আগের সরকার যে কাঠামোতে মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের চেষ্টা করেছে, এই সরকারের উদ্যোগগুলো তার থেকে বাহিরে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়েছে আরও বেশি সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে।’

চড়া মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ভর্তুকি মূল্যে আবারও টিসিবির ট্রাক সেল চালুর তাগিদ দেন পর্যবেক্ষকরা।