Image description
♦ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখভালে সরকারের নতুন উদ্যোগ ♦ সনদ বাস্তবায়ন পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ নির্ধারণ হবে

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি দেখভাল করতে নতুন আরও একটি কমিশন গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত ওই কমিশনের নাম দেওয়া হচ্ছে- সংস্কার বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ কমিশন। ৭ থেকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিশনে কারা থাকবেন সে সিদ্ধান্তও শিগগিরই জানানো হবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশির ভাগ সদস্য নতুন ওই কমিশনে থাকতে পারেন। দু-একজন নতুন সদস্য কমিশনে যোগ হবেন। ঐকমত্য কমিশনের গঠন করা ‘বিশেষজ্ঞ’ দল থেকেও কয়েকজনকে নতুন কমিশনের সদস্য করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইন বিশারদ ও নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দিতে চায় সরকার। কমিশনে অধ্যাপক আলী রীয়াজের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেখা যাক সামনে কী হয়। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। সময়ই বলে দেবে আমি ওই কমিশনে থাকব কি থাকব না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যেসব সুপারিশ করেছে তার ফলোআপ করতেই ওই কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সনদ বাস্তবায়ন পর্যন্ত কমিশনের মেয়াদ নির্ধারণ হবে। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী সরকারকে সংস্কার বিষয়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়ার এখতিয়ার থাকবে ওই কমিশনের। তারা জানান, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ‘বল’ এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ‘কোর্টে’। দেশের রাজনীতিবিদদের চোখ সেদিকেই। মেয়াদের শেষ দিকে এসে সরকারের সফলতা আর ব্যর্থতার দায় এসে পড়েছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ওপর। সরকারও বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে দেখছে। কয়েক দিনের মধ্যেই দলগুলোর ঐকমত্য হওয়া গণভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার। একই সঙ্গে নতুন ওই কমিশন গঠন নিয়েও ঘোষণা দেওয়া হবে।

এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ গত ৩১ অক্টোবর শেষ হলেও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে থাকা অফিস এখনো বহাল রয়েছে। যে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এত দিন ওই কমিশনে কাজ করেছেন তারাও হাজিরা দিচ্ছেন ওই অফিসে। সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজ কিছু দিনের জন্য আমেরিকা যাচ্ছেন। এর আগে কমিশনের সঙ্গে যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার আমেরিকা গেছেন। ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তারা আবার দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যেই সরকারের নতুন ওই উদ্যোগের বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ সচিবালয়ে থাকা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অফিস সরানোর কোনো আদেশ বা নির্দেশনা এখন পর্যন্ত তারা পাননি। তাই আপাতত এখানেই অফিস করছেন। গতকালও সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংসদের অফিসে হাজিরা দিয়েছেন। এমনকি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজও গতকাল অফিস করেছেন। আজও করবেন বলে তারা জানান। তার ব্যবহৃত কক্ষ আপাতত থাকছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঐকমত্য কমিশনের কর্মকর্তারা।

কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর পর শুক্রবার শেষ হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নির্ধারিত মেয়াদ। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশনগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ২৮ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়-সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয় গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়। জাতীয় সনদে সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি, এরপর সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি নেওয়ার জন্য গণভোট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর বাইরে জুলাই সনদে থাকা সুপারিশগুলোর মধ্যে ৯টি সুপারিশ নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে বলে মনে করে কমিশন। অন্যদিকে, ২৮টি সংস্কার প্রস্তাব অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে।

কমিশনের এই সুপারিশের পরপরই বিএনপিসহ কয়েকটি দল এর তীব্র বিরোধিতা করে। পাশাপাশি কমিশনের কঠোর সমালোচনায় অংশ নেয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ রাজনীতিতে ঐক্যের বদলে অনৈক্য বা বিভক্তি বৃদ্ধি করবে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘চাপিয়ে দেওয়া’র নীতি অবলম্বন করেছে বলে মন্তব্য করে তারা। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের সমালোচনাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে বিলুপ্ত হওয়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তাদের প্রত্যাশা, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই দলগুলোর মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বিভাজনের অবসান হবে।