মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ-বাড়তি ট্যাক্স আরোপে পিষ্ট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন উত্তরায় বসবাসরত বাসিন্দারা। ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া উত্তরার নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের বাসাবাড়িতে দিনভর নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস থাকে না, তবুও মাসে মাসে বিল দিতে হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা, সড়কে জমে থাকে ময়লা পানি, অপরিকল্পিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ফলে পাড়া মহল্লায়-পানিাবদ্ধতা, পঁচা ও দুর্গন্ধময় পানি ব্যবহারে বাড়ছে চুলকানি, সড়কের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা, হকারদের দখলে ফুটপাত চলে যাওয়া, ভাঙ্গাচুরা সড়কে যানজট চলাচল করতে না পারার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে বেটারিচালিত অটোরিকশা আতংক।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বলছেন, দিনের বেলায় বাসাবাড়িতে গ্যাস থাকে না, রাতে সড়কে বাতি জ্বলে না, তাহলে ট্যাক্স দিয়ে আমাদের কী লাভ। এমন শত শত অভিযোগ রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ উঠেছে নাগরিক জীবনের এসব সমস্যার তোয়াক্কা করছেন না ডিএনসিসির প্রশাসক মো. এজাজ। তিনি নিজেকে জাহির করতে পড়ে আছেন খাল উদ্ধার কাজে। সিটি কর্পোরেশন হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ উদ্ধার কাজে সরব না থাকলেও খাল উদ্ধার কাজে কয়েক মাস যাবত বেশি সময় দিচ্ছেন।
তিনি নিচ্ছেন বাহ্বা, ডেঙ্গু মশার কামড়ে মরছে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন লাখো মানুষ।
রাজধানীর আধুনিক উত্তরা মডেল টাউন এলাকার জনজীবনে বাড়ছে সীমাহীন দুর্ভোগ, এখানকার সেবা সংস্থাগুলোতে বাড়ছে সমন্বয়হীনতা, এর ফলে নাগরিক জীবনে বাড়ছে ভোগান্তি। ডিএনসিসির অপরিকল্পিত উন্নয়নই উত্তরাকে বানাচ্ছে ‘দুর্ভোগের আখড়া’।
এখানে শৃঙ্খলার চেয়ে বিশৃঙ্খলাই বেশি। প্রতিদিন নতুন নতুন সংকটে দেখা যায় উত্তরার জীবনচিত্র। অবৈধ অটোরিকশার দাপটে অসহায় এখানকার পথচারী।
ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে উত্তরার সেক্টরগুলোতো হরহামেশাই যানজট লেগে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকা পড়ে চাকুরীজীবীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
ট্রাফিক ব্যবস্থার দৈন্যদশার কারণে গণপরিবহনে বাড়ছে নৈরাজ্য। মাসের পর মাস সড়কে পড়ে থাকা বালির স্তূপ, যানজট বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ-সব মিলিয়ে রাজধানীর প্রবেশপথ উত্তরার জনজীবনে বিশৃঙ্খলা যেন নিত্যসঙ্গী।
উত্তরাবাসীর অভিযোগ, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা যেসব সমস্যায় জর্জরিত ছিলাম, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরও ডিএনসিসির সেবা খাতগুলোর কার্যত পরিবর্তন হয়নি। তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে না। তারা বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে। সেক্টরগুলোতে প্রতিদিন নতুন নতুন সংকট যুক্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে বিমানবন্দর মহাসড়ক থেকে শুরু করে উত্তরাজুড়ে পাড়া মহল্লার অলিগলির-সব জায়গাতেই ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। বেপরোয়া চলাচল যাত্রী ও পথচারীদের জন্য আতঙ্কের নাম অটোরিকশা, সেক্টর সড়কে যানজটের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিত্যনতুন দুর্ভোগে মডেল টাউন উত্তরায় অনেকেই বসবাসের আগ্রহ হারাচ্ছে, তবুও জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মুখে মুখে নানা উদ্যোগের কথা বললেও বাস্তবের চিত্র ভিন্ন।
স্থানীয়রা জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দাপট, যানজট নিরসন, পানিবদ্ধতা নিরসন, গণপরিবহন সংকট, ভাংগাচুরা বেহাল রাস্তাঘাট সংস্কার, মশার উপদ্রব কমানো, সড়কে পরে থাকা আবর্জনার স্তূপ কিংবা মানুষের হাঁটা-চলার জন্য ফুটপাতের অভাব-কোনোটারই সমাধান দেখা যাচ্ছে না। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীর প্রবেশমুখ আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর মহাসড়কে প্রতিদিন লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। কর্মস্থলে যেতে মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে কাটাতে হচ্ছে। পথচারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এখনই জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামী দিনে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে উত্তরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখানকার নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সমন্বয়হীনভাবে কাজ করছে ডিএনসিসি’র প্রশাসক মো. এজাজ। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও পরিকল্পিত কর্মধারা না থাকায়, যথাযথ সমীক্ষা ছাড়া গৃহীত বড় বড় প্রকল্পগুলো নাগরিক জনস্বাস্থ্য ও জনপরিসেবাকে দুর্বৃত্তায়ন, দৌরাত্ম্যের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
তারা বলছেন, জনভোগান্তি নিরসন নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনি নগর সেবায় জবাবদিহিহীনতার অবসান ঘটাতে ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। ডিএনসিসির অব্যবস্থাপনা থেকে মুক্তি, হকারমুক্ত ফুটপাত ও অটোরিলগার নৈরাজ্য থেকে মুক্তি চায় উত্তরার বাসিন্দারা।