Image description

একই কলেজে পড়াশোনা সূত্রে পরিচয়, তারপর প্রেম-পরিণয়। তবে সেই সংসার টেকেনি চারদিনও। মেয়েটির লাশ উদ্ধারের পর তার স্বামী সাজ্জাদুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে হয়েছে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা।

পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছে, তবে তা আত্মহত্যা মানতে নারাজ মেয়েটির বাবা। আক্ষেপ করে তিনি বলেছেন, “চারদিন আগে মেয়েটা বাসা থেকে বের হল, ফিরল লাশ হয়ে।”

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার আশুলিয়ার পলাশবাড়ী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয় নওরীন আফরোজ মোহনার। পরদিন তার ভাই রাহাত আহম্মেদ আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই নাহিদের সঙ্গে মোহনার পরিচয় ঘটে ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়তে গিয়ে। ধানমন্ডি শাখার এই দুই শিক্ষার্থী ঘটনার সময় প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করতেন।

নাহিদকে অভিযুক্ত করে গত ৩০ জুলাই অভিযোগপত্র জমা দেন আশুলিয়া থানার এসআই হারুনুর রশীদ। এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১১ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলাম সোহা

মামলার বাদী রাহাত আহম্মেদ বলেন, “আমাদের সবার আদরের ছিল মোহনা। সেই বোনটা আজ নেই। যার কারণে সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে, তার বিচার চাই।”

মোহনার বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমার তিন মেয়ের মধ্যে ছোট মোহনা। বহু আশা করে, শখ করে ওকে ড্যাফোডিল পলিটেকনিকে ভর্তি করেছিলাম। ছেলেটা ফাউল। আমার মেয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পিছে লাগে।

“মেয়ে মারা যাওয়ার পর শুনেছি, সে নাকি আমাদের বাসা পর্যন্ত এসেছে। মেয়েটার সাথে ছেলেটার সম্পর্ক হয়ে যায়। আমার জানিও না, বুঝিও না।”

তিনি বলেন, “২৬ ডিসেম্বর মেয়েটা বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশ্য বের হয়। ওইদিন আমি নারায়ণগঞ্জ ছিলাম। ওর মাকে ফোন দিয়ে জানতে চাই, মেয়ে বের হয়েছে? মেয়ের মা জানায়, ক্লাস ১২টায়, ও তো ১০টায় বের হবে। মনের ভেতর কেমন কেমন লাগে, বারবার বাসায় ফোন দেই।

“পরে ওর মা জানায়, মেয়েটা ১০টায় বের হয়ে গেছে। কিন্তু সেদিন সে কলেজে যাইনি। এটা ছিল ওর চরম ভুল, আর সেই ভুলের মাশুল দিতে হলো জীবন দিয়ে। যেদিন মেয়েটা মারা যায়, সেদিন সে তার বড় বোনকে ফোন করে জানায়, চাপে আছে। আর হয়তো ফোন দিতে পারবে না।”

মোহনাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, “নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় তারা (মোহনা ও নাহিদ) একটা বাসা নেয়। মেয়েটাকে সেই বাসায় খুন করা হয়। বাড়িওয়ালা ঝামেলা এড়াতে সুইসাইড বলে চালিয়ে দিয়েছে। ওইদিন তারা একসাথে বাসায় ফেরে। বাড়িওয়ালার সাথে আমার মেয়ের দেখা হয়। সে তাকে সালাম দেয়। এমন কি হলো যে তাকে সুইসাইড করতে হবে?

“চারদিন আগে মেয়েটা বাসা থেকে বের হল, ফিরল লাশ হয়ে। আমার এতো আদরের মেয়েটা। আর কেউ গলায় ফাঁস দিলে, গলায় দাগ থাকবে, জিহ্বা বের হবে। কিন্তু গলায় কোনো দাগ ছিল না। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। মেয়ের শোকে ওর মা পাগল হয়েছে। এই ভালো তো এই মন্দ।”

তবে অভিযোপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেছেন, প্রেমের সম্পর্ক থেকে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মোহনা ও নাহিদ। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে মোহনা বাসার কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরিবারের লোকজন মোবাইলে ফোন দিলে জানান, নাহিদকে বিয়ে করে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় আনিসুর রহমানের বাসা ভাড়া নিয়েছেন। বিয়ের পর থেকে মোহনার সঙ্গে নাহিদ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করে আসছিল। তাকে মারধর করতো বলে পরিবারকেও জানিয়েছিল।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাহিদ ফোনে মোহনার মাকে জানান, মোহনা গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে। সংবাদ পেয়ে মোহনার পরিবার সেখানে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে লাশ দেখতে পায়। গলায় কাল দাগ দেখতে পায়।

“নাহিদ বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মোহনার সাথে খারাপ আচরণসহ শারীরিক ও মানসিক আঘাত করায় লজ্জায় ও সম্মানহানীর কারণে সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এতে নাহিদ তাকে প্ররোচিত করেছে।”

বাড়িওয়ালা আনিসুর রহমান বলেন, “ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। ওরা স্বামী-স্ত্রী থাকবে জানিয়ে বাসাটা ভাড়া নেয়। বাসায় ওঠার কথা ছিল ১ জানুয়ারি। কিন্তু ওরা ২৭ ডিসেম্বরই বাসায় উঠে যায়।

“এসে বলে, আগের বাসায় একটু সমস্যা ছিল। তাই আগে চলে এসেছে। আমার বাসাটা ফাঁকা থাকায় আমিও তেমন কিছু বলিনি। এরপর তো এই ঘটনা।”

তিনি বলেন, “আমি বাসা ভাড়ার টাকাটাও পাইনি। আর এ ঘটনার পর ওই বাসাটা ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়ি। অনেকে বাসা ভাড়া অ্যাডভান্স করেও ঘটনা জেনে আর উঠতে চায় না। কি একটা ঝামেলা!”

জানতে চাইলে নাহিদের আইনজীবী রতন কুমার অধিকারী বলেন, মামলার নথি দেখে এ বিষয়ে বলতে পারবেন।

রাহাত আহম্মেদ মামলায় অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে নাহিদ মোহনার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ আচরণ করছিল। তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে বলে বড় বোনকে জানিয়েছিল। ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে নাহিদ ফোনে তার শাশুড়িকে জানান, মোহনা গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে। খবর পেয়ে মোহনার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন আনিছুর রহমানের বাড়ির সামনে এসে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মোহনার লাশ দেখতে পায়। তার গলায় কালো দাগ ছিল।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, নাহিদ বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে মোহনাকে আঘাত করতেন। লজ্জায় ও সম্মানহানির ভয়ে মোহনা বাসার সিলিং ফ্যানের রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।