চট্টগ্রামে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বলছে, বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিমুখ করতেই টার্গেট করা হচ্ছে এ-ওয়ান ক্যাটাগরির ভিআইপি পোশাক কারখানা। বেতন-ভাতা নিয়মিত দেয়া হলেও সংঘবদ্ধ চক্রটি নানা অজুহাতে সংঘাত সৃষ্টি করছে। তবে যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে শিল্প পুলিশ।
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা। কিন্তু শ্রমিকেরা সে ফাঁদে পা না দেয়ায় শুরু হয় গুজব সৃষ্টির পাঁয়তারা। নির্যাতনে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর গুজব রটিয়ে পুরো ইপিজেডকেই অস্থির করে তুলে সংঘবদ্ধ চক্রটি। এমনকি কথিত মৃত শ্রমিকদের ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করা হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে বন্ধ করা হয় ৮টি কারখানা।
তবে কথিত মৃত শ্রমিকদের জীবিত ফিরে আসার তথ্য নিশ্চিত হওয়ায় এক সপ্তাহের পর খুলে দেয়া হয় বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো। আর এটিই হলো চট্টগ্রাম ইপিজেডে গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতা সৃষ্টির সবশেষ ঘটনা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, কাফনের কাপড় সরিয়ে আবার এক পর্যায়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং সেটি বিভিন্ন কারখানায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে অডিও-ভিডিও সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই শেষে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ঘটনাটি সম্পূর্ণ গুজব ছিল। সেখানে কেউ মারা যায়নি।’
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিশ্বখ্যাত বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশবিমুখ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। যার অংশ হিসেবে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ সত্ত্বেও এ ওয়ান এবং ভিআইপি কারখানাগুলোকে টার্গেট করেই অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। কারণ এসব কারখানাতেই প্রস্তুত হয় প্রতিষ্ঠিত বিদেশি ব্র্যান্ডের পোশাক।
বিজিএমইএর পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, সুপার কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরিগুলোর কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য কুচক্রী মহল সক্রিয় রয়েছে।
চট্টগ্রামের ৪৬৪টি কারখানায় কাজ করেন অন্তত ৮ লাখ শ্রমিক। এর বাইরে চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে আরও তিন লাখ শ্রমিক রয়েছে। আর তাই অসন্তোষ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে গার্মেন্টস সেক্টরকেই বেছে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বিজিএমইএর। সংগঠনটির সহ সভাপতি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী বলেন, পোশাক খাতে অসন্তোষ হলে সেটি বাংলাদেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এটি দেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত।
এরমধ্যে মার্কিন ট্যারিফ ইস্যু নিয়ে জটিলতা অনেকটা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। এমন ইতিবাচক পরিস্থিতিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর চক্রান্তে জড়িত থাকার শঙ্কা রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এখনকার নানা ইস্যু।
বিজিএমইএর পরিচালক এম ডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, পোশাক খাতের প্রতিযোগিতায় ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এটিকে নস্যাৎ করার জন্য দেশি-বিদেশি কুচক্রী মহল কাজ করে যাচ্ছে। তারা নানা ধরনের গুজব সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
গত এক বছরে বেতন-ভাতার আন্দোলন ছাড়াও গার্মেন্টস কারখানায় তুচ্ছ ঘটনা এবং গুজবকে কেন্দ্র করে একশটির বেশি সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।