Image description

২০০৩ সাল থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আওতায় ৩৪৫ কিলোমিটার রেলপথে কংক্রিটের স্লিপার বসানো শুরু হয়। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই আমদানি করা এই স্লিপারগুলো ভাঙতে শুরু করে। এরই মধ্যে কয়েক দফা পরিবর্তনও করা হয়েছে। তবে বর্তমানে ব্যাপক হারে স্লিপার ভেঙে পড়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে ট্রেন চলাচল।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখানে কমপক্ষে ৫০ হাজার স্লিপার ভেঙে পড়াসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রায় প্রতিদিন বিশেষ টহল দেওয়া হচ্ছে রেলপথে। এরই মধ্যে ভাঙা স্লিপারগুলো সরিয়ে নতুন করে বসাতে ২২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তা এখন রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সবেচেয়ে বেশি স্লিপার ভেঙে পড়েছে রেলপথের পাবনার ঈশ্বরদী থেকে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া অংশে। এখানে এই ৪৮ কিলোমিটার রেলপথে প্রায় আড়াই হাজার স্লিপার ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। রেলওয়ের দায়িত্বরত একাধিক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এর মধ্যে কিছু আছে একেবারেই ভেঙে গেছে। আবার কিছু স্লিপার আছে ভাঙতে শুরু হয়েছে।

স্লিপার ভেঙে পড়ায় ট্রেন চলাচল ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফলে প্রায় প্রতিদিন এই লাইনটি টঞ্চলি-গাড়িতে ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। পাবনার ভাঙ্গুড়ার বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, কয়েক বছর আগেই অনেক স্লিপার পরিবর্তন করতে দেখলাম। এখন আরো স্লিপার ভেঙে পড়েছে। ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে।
 
যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, গত চার বছরে উল্লাপাড়া থেকে চাটমোহর রেলস্টেশন পর্যন্ত রেলপথে পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর বড়ালব্রিজ স্টেশনে ও ২০২৩ সালের ৫ মে উল্লাপাড়ায় মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। ২০২৫ সালের ২৪ জুন ভাঙ্গুড়া স্টেশনের পাশে এবং একই বছর ২০ সেপ্টেম্বর দিলপাশার রেলস্টেশনের পাশে লাইনে ফাটল ধরে বস্তা দিয়ে ট্রেন পারাপার করতে হয়। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গুড়া স্টেশনের পাশে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেন চলাচল ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ঈশ্বরদীর মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় কংক্রিটের চেয়ে কাঠের স্লিপার টেকসই বেশি। কংক্রিটের স্লিপার ১০ বছরও যাচ্ছে না। রেলের দায়িত্বে থাকা আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ৩৪৫ কিলোমিটারে প্রায় ৫০ হাজার স্লিপার ভেঙে গেছে। কিছু স্লিপারে ফাটল ধরেছে। ভাঙা স্লিপারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পরিবর্তন ও অন্যান্য খরচ মিলে পাঁচ বছর মেয়াদি ২২ কোটি টাকার প্রকল্প রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পশ্চিম রেলের প্রধান প্রকৌশলী আহম্মদ হোসেন মাসুম কালের কণ্ঠকে বলেন, জয়দেবপুর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজার স্লিপার ভেঙে গেছে। লাইনের সাড়ে পাঁচ লাখ স্লিপারের মধ্যে বড় জোর ২-৪ শতাংশ স্লিপার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্লিপারগুলো দ্রুত পরিবর্তনের জন্য আমরা নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি।