Image description
৯ মাসে ২ হাজার ৩৬১ হত্যা নদী থেকে মাসে ৪৩ লাশ উদ্ধার সেপ্টেম্বরে ৫০ ডাকাতি এবং ১৬৯ ছিনতাইয়ের ঘটনা

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিনদুপুরে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। খোদ পুলিশ সদস্যরাও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েছে। হত্যার পর আলামত নষ্ট করার উদ্দেশ্যে লাশ নদীতে ফেলা হয় বলে পুলিশের ধারণা।

এমন পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে দুই হাজার ৩৬১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এই সময়ের মধ্যে থানাগুলোতে দুই হাজার ৯১১টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে হত্যার ঘটনায় মামলা রয়েছে ৫৫০টি।

এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মাসে গড়ে আড়াই শর বেশি হত্যা মামলা করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৮-৯ জনকে হত্যা করা হচ্ছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নদীতে লাশ ফেলার ঘটনা।

নদী থেকে প্রতিদিন উদ্ধার হচ্ছে অজ্ঞাতপরিচয় লাশ, যা হত্যার প্রমাণ নষ্ট করার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। চলতি বছর নদী থেকে মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছর প্রতি মাসে নৌ পুলিশ এ পর্যন্ত গড়ে ৪৩টি লাশ উদ্ধার করেছে। গত বছর এই হার ছিল ৩৬টি।

রাজধানীর রামপুরার মতো জনবহুল এলাকায় গত ১৯ অক্টোবর দুপুরে ছিনতাইকারীরা বাস থেকে ইমরান নামের এক যাত্রীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

 
এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা মামলা করা হলে পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা আন্ত জেলা ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। একই দিন ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রইসনগর এলাকায় অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কনস্টেবল মো. রাসেল মিয়াকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ছিল ৫৭টি। চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ৫০টি ডাকাতি এবং ১৬৯টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

এর আগের মাস আগস্টে ২৩৮টি ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। জুলাই মাসে ছিনতাই ও ডাকাতি হয়েছে ২২৫টি। এ ছাড়া জুন মাসে ছিল ২০০টি।

এসব বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, হত্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, এটা ঠিক নয়। হত্যা, ছিনতাই ও ডাকাতির চিত্র আগেও এ রকম ছিল। তিনি বলেন, এমন একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পুলিশ যত তাড়াতাড়ি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করেছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এটা পারত কি না সন্দেহ!

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রেমসংক্রান্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানা ঘেরাও করা হচ্ছে। যারা পুলিশের কাছ থেকে সেবা চায়, তারা যদি পুলিশকেই কাজ করতে না দেয়, তাহলে উন্নতি হবে কী করে? অনেক জায়গায় পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে। যারা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির প্রত্যাশা করে, তাদেরও তো দায়িত্ব রয়েছে সহযোগিতা করার।

নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে নদী থেকে ৩০১ জন নারী-পুরুষ ও শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সর্বোচ্চসংখ্যক ৩৪টি লাশ পাওয়া গেছে। এরপর ঢাকায় ৩২টি। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ২০৯ জনের পরিচয় জানা গেলেও ৯২ জনের পরিচয় মেলেনি।

২০২৪ সালে ১২ মাস ৪৪০টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪১ জনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি। মরদেহ উদ্ধারের পর এ বছর বিভিন্ন থানায় অন্তত ৪১টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত বছর ৫৩টি মামলা করা হয়েছিল। লাশে পচন ধরায় তা শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। পচন ধরলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া যায় না। অনেক সময় স্বজনরাও চিনতে পারে না। ফলে বেশির ভাগ লাশ অজ্ঞাতপরিচয় থেকে যায়। তদন্ত কর্মকর্তা ও ফরেনসিক চিকিৎসকদেরও বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।

নৌ পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি কুসুম দেওয়ান গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, নদী থেকে যেসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়, এর মধ্যে হত্যা, আত্মহত্যা ও নৌ দুর্ঘটনার লাশই পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর পরিচয় শনাক্ত করাটা কঠিন হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মরদেহ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ভেসে যায় কিংবা প্রমাণ নষ্ট করতে অপরাধীরা অন্য কোথাও হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়। বর্ষাকালে নদীতে বেশি লাশ পাওয়া যায়।