Image description
প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপি

অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে কোনো দলীয় লোক থেকে থাকলে তাকে অপসারণ করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে আসন্ন নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে এই মুহূর্ত থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে নেয়ার দাবি করছে দলটি। এ ছাড়া প্রশাসনে ফ্যাসিস্ট দোসরদের সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন করারও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যমুনায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যুমনায় বৈঠকে বসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। ৭টা ১১ মিনিটে তারা যমুনা থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আজকে প্রধান উপদেষ্টার কাছে এসেছিলাম, আমাদের কতগুলো রাজনৈতিক কনসার্ন নিয়ে কথা বলার জন্য। বিশেষ করে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠানকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে দেয়ার জন্য এই মুহূর্ত থেকে যেটা প্রয়োজন হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এখন কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের আদলে নিতে হবে। অর্থাৎ কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট বলতে আমরা যা বোঝাই- একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সেই ভূমিকায় তাদেরকে যেতে হবে। সেজন্য প্রথমেই যে বিষয়টি প্রয়োজন হবে, তাকে ও প্রশাসনকে পুরোপুরিভাবে নিরপেক্ষ একটা ধারণা জনগণের মধ্যে তৈরি করতে হবে। 
তিনি বলেন, বিশেষ করে সেক্রেটারিয়েটে যারা এখনো আছেন, যাদেরকে চিহ্নিত ফ্যাসিস্টের দোসর বলা হয়- তাদেরকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ কর্মকর্তা দেয়ার জন্য আমরা বলেছি। আমরা বলেছি যে, প্রশাসনেও, জেলা প্রশাসন বিশেষ করে সেখানেও একইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা কিছু কিছু কথা বলে এসেছি, যেগুলো আমরা মনে করেছি যে-তারা এখনো সেই পুরনো সরকারের স্বার্থ পূরণ করছে, তাদেরকে অপসারণের কথা আমরা বলেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সেইসঙ্গে পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন করে যে নিয়োগ দেয়া হবে বা পদোন্নতি দেয়া হবে, সেই ক্ষেত্রে একদম নিরপেক্ষ অবস্থা নেয়ার কথা আমরা বলেছি। আমরা এসেছি যে, বিচার বিভাগে বিশেষ করে হায়ার জুডিশিয়ারিতে এখনো যে সমস্ত ফ্যাসিস্টদের দর্শক আছেন, তাদেরকে সরিয়ে সেখানে নিরপেক্ষ বিচারকদের দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও এটা জুডিশিয়ারি ব্যাপার। তারপরও প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সবকিছুর দায়িত্বে আছেন, তার কাছে আমরা আমাদের সেই কনসার্নগুলো জানিয়ে এসেছি। সরকারকে সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সরকারের মধ্যে যদি কোনো দলীয় লোক থেকে থাকেন, তাকে অপসারণ করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। 

নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা: ওদিকে প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। এক বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে নিবৃত রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র নেতারা। নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি’র নেতাদের জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তার তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য একাধিক ‘ফিট লিস্ট’ থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করে প্রত্যেককে নির্বাচনের আগে যথাযোগ্য স্থানে নিয়োগ দেয়া হবে।  

তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে যিনি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবেন সে রকম যোদ্ধাকেই আমরা বেছে নেবো। এটা আমার হাতে থাকবে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা করবো।

বৈঠকে পুলিশের নিয়োগ এবং বদলি প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। 

পাশাপাশি সমপ্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি’র নেতারা। এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কিনা এ বিষয়ে অনুসন্ধানেরও আহ্বান জানান তারা। ওদিকে চলমান রাজনৈতিক সংলাপের অংশ হিসেবে আজ বুধবার জামায়াতে ইসলামী একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।