Image description

জোবায়েদ তখনো মারা যায়নি। বাঁচার জন্য দুই তলা থেকে উপরে ওঠে। তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল বর্ষা। তখন বর্ষাকে দেখে জোবায়েদ বলে, আমাকে বাঁচাও, কিন্তু বর্ষা বলে, তুমি না মরলে আমি মাহীরের হতে পারব না। বর্ষা তার মৃত্যু কনফার্ম করে যায়। তখন জোবায়েদ বাঁচার জন্য দরজায় নক করেও পায়নি’—জবি ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইনের হত্যার ঘটনায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন ডিএমপির লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী।

আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপির) মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পুলিশ। 

ডিসি মল্লিক আহসান বলেন, মাহির রহমানের সাথে বার্জিস শাবনাম বর্ষার দেড় বছর যাবৎ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ভিকটিম মো. জোবায়েদ হোসেন বার্জিস শাবনাম বর্ষাকে প্রায় এক বছর ধরে বাসায় গিয়ে পড়াতেন এবং একপর্যায়ে উভয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়। ঘটনার একমাস পূর্বে মাহির জানতে পারে জোবায়েদ এর সাথে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক আছে। বিষয়টি মাহির মেনে নিতে পারে না এবং এর সূত্র ধরে মাহির ও বর্ষার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে বর্ষা মাহিরকে জোবায়েদকে হত্যা করার প্ররোচনা দেয় এবং তারা জোবায়েদকে হত্যা করার জন্য একাধিক পরিকল্পনা করে। জোবায়েদ বাসায় কখন পড়াতে আসে এবং কখন চলে যায় নিয়মিত বর্ষা মাহিরকে জানায়। মাহির তার বন্ধু আয়লান এর সাথে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি জানায় এবং তারা দুজন আগানগর বউ বাজার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ এলাকায় হতে ৫০০ টাকা দিয়ে একটি সুইচ গিয়ার চাকু কিনে । 

তিনি বলেন, ঘটনার দিন রবিবার ১৯ অক্টোবর বিকাল অনুমান বিকেল সাড়ে ৪ টায় জোবায়েদ বংশাল থানাধীন ৩১নং ওয়ার্ডস্থ নুর বক্স লেন এর ১৫নং হোল্ডিং রৌশান ভিলায় টিউশনি করাতে গিয়ে বাসার নিচতলার সিঁড়ির নিচে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা বার্জিস শাবনাম বর্ষার সাবেক প্রেমিক মোঃ মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান বাসার নিচে জোবায়েদ পৌঁছালে মাহির জোবায়েদকে বর্ষার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে এবং একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে মাহিরের ব্যাগে থাকা সুইচ গিয়ার চাকু বের করে জোবায়েদের গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনার সময় বর্ষা তিন তলায় দাঁড়িয়ে ছিল।

এর আগে, মঙ্গলবার সকালে বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এটা বর্ষা ও মাহীরের পরিকল্পিত হত্যা। বর্ষার সঙ্গে মাহীরের ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝে আবার বর্ষা জোবায়েদের ওপর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় বর্ষা মাহীরকে না করে দেয়। এবং সে জোবায়েদেকে পছন্দ করে বলে জানায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার বয়ফ্রেন্ড মাহীরকে জানায় যে জোবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখন জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বর্ষা ও মাহীর।

অভিযুক্ত ছাত্রী ও মাহির রহমান এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার জোবায়েদ হোসাইন

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা স্বীকার করেনি ছাত্রী। পরবর্তীতে মাহির ও তাকে মুখোমুখি করলে সত্য ঘটনা জানায়। জোবায়েদকে কীভাবে সরিয়ে দেয়া যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পরিকল্পনা করেন তারা।  

জোবায়েদ হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯- ২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি ও শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তাকে হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ছাত্রীসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার শেষ প্রস্তুতি চলছে। সোমবার জোবায়েদকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

এক বছর ধরে তিনি পুরান ঢাকার আরমানীটোলায় নুরবক্স লেনে রৌশান ভিলা নামের বাসায় ছাত্রীটিকে ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন।  রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪ টার ৪৫ মিনিটের দিকে ছাত্রীর বাসার তিন তলায় ওঠার সময় সিঁড়িতে তিনি খুন হন। নিচ তলার সিঁড়ি থেকে তিন তলা পর্যন্ত রক্ত ছড়িয়ে ছিল। 

সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় জোবায়েদকে। পরবর্তীতে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা তাতীবাজার মোড়ও অবরোধ করে রাখেন। রবিবার রাত ১১টার দিকে ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে চল জিজ্ঞাসাবাদ। রাতে আরমানিটোলার নূরবক্স রোড়ের নিজ বাসা থেকে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়।