Image description
 

ইসরাইল তুরস্কের অনুরোধে চলতি মাসের শুরুর দিকে অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি ও তুর্কি নাগরিককে গাজা উপত্যকা ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার পরিবারের ১৬ জন সদস্য।

 

দুই দেশের কূটনৈতিক চুক্তির অংশ হিসেবে ১৪ জন তুর্কি নাগরিক এবং তুর্কি নাগরিকদের ৪০ জন নিকটাত্মীয়—যাদের মধ্যে স্বামী, স্ত্রী, সন্তান, পিতা ও মাতা রয়েছেন—গাজা থেকে বের হতে পেরেছেন বলে দুটি পৃথক সূত্র মিডল ইস্ট আই–কে জানিয়েছে

এই সিদ্ধান্ত আসে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর, যেখানে তুরস্ক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল এবং হামাসকে আলোচনায় আনতে সহায়তা করেছিল।

হানিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পাঁচজন তুর্কি নাগরিকের আত্মীয় ছিলেন।

উল্লেখযোগ্য যে, তুরস্কের সঙ্গে হামাসের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তেহরানে ইসরাইলের হামলায় নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসমাইল হানিয়া হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ছিলেন।

যদিও তুরস্কে হামাসের কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যালয় নেই, সংগঠনটির নেতারা কাতার, তুরস্ক, মিসর ও লেবাননের মধ্যে ঘন ঘন যাতায়াত করেন এবং অনেক সময় তুরস্কে মাসের পর মাস অবস্থান করেন।

  


 

দ্য টেলিগ্রাফ–এর ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্ক হানিয়াসহ বেশ কয়েকজন হামাস নেতাকে নাগরিকত্ব প্রদান করেছিল।

ইসরাইল সরকারের এই সিদ্ধান্তকে বিশেষজ্ঞরা অপ্রত্যাশিত হিসেবে দেখছেন, কারণ ২০২৪ সালের এপ্রিলে গাজায় হানিয়ার গাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় তার তিন ছেলে ও চার নাতি নিহত হয়। একই সময়ে ইসরাইল দক্ষিণ ইসরায়েলের টেল শেভা শহরে বসবাসরত হানিয়ার বোন সাবাহ আল-সালেম হানিয়াকেও গ্রেফতার করে।

ইসরাইলের নীতিনির্ধারক মহলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, এই সিদ্ধান্ত তেল আবিবের পক্ষ থেকে আঙ্কারার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় উষ্ণ করার কূটনৈতিক প্রয়াসেরই প্রতিফলন।

তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা

গাজা যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরাইলি গণমাধ্যমে তুরস্কের নেতৃত্বের প্রতি তুলনামূলকভাবে নরম সুর লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ডানপন্থি সংবাদমাধ্যম ইয়নেট তাদের এক প্রতিবেদনে তুর্কি গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম কালিনকে ‘জিম্মিদের প্রতি সহানুভূতিশীল’ এবং ‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে আগ্রহী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

ইসরাইলি সাংবাদিক বেন ক্যাসপিট মারিভ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরাইলের তীব্র সমালোচক হলেও, তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানকে ইসরাইলের নিরাপত্তা মহল আরও বাস্তববাদী হিসেবে দেখে।’

একই পত্রিকায় প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে ইসরাইলি চেম্বার অব কমার্স ফেডারেশনের সভাপতি উরিয়েল লিন বলেছেন, ‘গাজার পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরস্কের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলের উচিত এরদোগানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা।’

তিনি আরও লেখেন, ‘তুরস্ক কখনোই ইসরাইলের শত্রু ছিল না। দুই দেশের মধ্যে বহু বছর ধরে ফলপ্রসূ বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও পর্যটন সম্পর্ক বিদ্যমান।’

 

 

 

তিন বছর আগে ৬৫টি ইসরাইলি কোম্পানির একটি ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল নিয়ে তুরস্ক সফর করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিন বলেন, ‘আমাদের প্রতি সেখানে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। প্রায় ২০টি গণমাধ্যম ইতিবাচকভাবে আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল—এমন আচরণ কোনো বৈরী দেশে সম্ভব নয়।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইসরাইলের পররাষ্ট্রনীতি যেন হঠকারী সিদ্ধান্তের বদলে বিচক্ষণতার ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়,’ এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সংযম বজায় রাখার প্রশংসা করেন।

লিনের মতে, ‘তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারই হবে ইসরায়েলের নতুন পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বাস্তব পরীক্ষা। এটি কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বরং অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেও অত্যাবশ্যক।’