Image description

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের পদটি শূন্য হয়েছে গত ১০ অক্টোবর। ‘রহস্যজনকভাবে’ এপিডি মো. এরফানুল হককে সরিয়ে দেওয়ার পর এখন পর্যন্ত নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে শূন্য থাকা এপিডির দায়িত্ব নিজ কাঁধেই তুলে নিয়েছেন জনপ্রশাসনের নতুন সিনিয়র সচিব এহছানুল হক। রোববার এ-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তবে এটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এপিডি এরফানুল হককে আগের জনপ্রশাসন সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের বলয়ের কর্মকর্তা ধরে নিয়েই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি কর্মকর্তারা। তবে তিনি মোখলেস উর রহমানের অনুসারী এমনটি মানতে নারাজ অনেকেই। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজকে বদলি করে জনপ্রশাসনে সংযুক্তি দেওয়া হয়। তাকেই এপিডি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। তিনি বিসিএস ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা। কিন্তু আমলাদের একটি পক্ষের বিরোধিতার মুখে তাকে এপিডির আসনে বসানো হয়নি। পরে তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নানা-ঝামেলা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ১৭ বছরের বঞ্চনা মেটাতে গিয়ে বেশ হিমশিম খায় জনপ্রশাসনের এপিডি অনুবিভাগ। কারণ এ অনুবিভাগই নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে কাজ করে। ফলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। অতীতে এপিডি হওয়ার জন্য কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ তদবির করতেন। তদবিরের এ সংস্কৃতি এখনো আছে। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট থেকে এপিডি এবং এই অনুবিভাগের অন্যান্য অধিশাখা ও শাখার কর্মকর্তারা নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। ফলে সরকার বিতর্ক এড়াতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা হিসাব-নিকাশ করে থাকে। এরফানুল হককে বদলির পর ফিরোজ সরকারকে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা ছিল সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের; কিন্তু একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের অনুসারী আমলাদের আপত্তির মুখে তাকে এপিডি করার চিন্তা থেকে সরে যায় সরকার। নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার মতো কর্মকর্তার খোঁজ মিলছে না। এমন অবস্থায় নতুন এপিডি নিয়োগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত এপিডির সব কাজ সরাসরি করবেন জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক। ২২ দিন শূন্য থাকার পর গত ১২ অক্টোবর তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রাণয়ের সিনিয়র সচিব (চুক্তিভিত্তিক) হন। এর আগে তিনি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব (চুক্তিভিত্তিক) ছিলেন।

একাধিক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নানা ঝামেলার মধ্য দিয়েই যেতে হচ্ছে। এখানে কাজ করে কোনো কর্মকর্তাই সুনাম নিয়ে ফিরতে পারছেন না। এখন নতুন করে এপিডি নিয়োগ দেওয়ার মতো যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার সরকার যাদের নিয়োগ দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলছে দু-একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী আমলারা। তারা নিজেদের পছন্দের কর্মকর্তাদের প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফলে ‘স্বাধীনভাবে’ কাজ করতে পারছে না প্রশাসন।