
শেখ হাসিনার পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সেই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে ছয়টি আবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি। এসব আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দেন। আজ (মঙ্গলবার) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই আপিলের শুনানি হওয়ার কথা। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৬ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে মামলাটি।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছর ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পঞ্চদশ সংশোধনীর যেসব অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়, তার মধ্যে ত্রয়োদশ সংশোধনী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করার অংশটিও আছে। হাইকোর্টের এই রায়ের পর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল বা পুনঃস্থাপন হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।
প্রশ্ন ওঠে কেন? উত্তর হচ্ছে, দেড় দশক আগে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির আগে তা অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন আপিল বিভাগ, সেই রায়টি বহাল আছে।
কারা আবেদনকারী?
১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পরে এ রায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ বছর আগের বিতর্কিত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।
পরে ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া আরেকটি আবেদন করেন নওগাঁর রানীনগরের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন। এরপর আরো দুটি আবেদন করা হয়।
রিভিউ থেকে আপিল
রিভিউ আবেদনে আপিল করার অনুমতি দিয়ে আপিল শুনানি হবে, নাকি রিভিউ আবেদনেই চূড়ান্ত শুনানি করে আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন, এ নিয়ে দুই দিন শুনানির পর গত ২৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সিদ্ধান্ত দেন। ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দিয়ে চারটি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। একটি আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া দেওয়া হয়।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর পূর্বাপর
১৯৯৪ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের অধীনে মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের চাপে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ওই বছর ২৭ মার্চ সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে। এরপর এই পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম. সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এই সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
এরপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর সমর্থনে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এই ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। ওই বছর রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে আপিলে শুনানি শুরু হয়। সর্বোচ্চ আদালত এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন। তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি সে সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ আপিল বিভাগে তখন সাতজন বিচারপতি ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ছয় বিচারপতির তিনজনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। অন্য তিন বিচারপতি ভিন্নমত তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অর্থাৎ সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন অগণতান্ত্রিক এবং তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে তা বাতিলযোগ্য। তবে প্রয়োজনের নিরিখে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই রায় ঘোষণার সাত দিন পর অর্থাৎ ১৭ মে অবসরে যান এ বি এম খায়রুল হক। অবসরে যাওয়ার প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। তখন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে ‘তবে প্রয়োজনের নিরিখে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে।’ এই পর্যবেক্ষণ বাদ দেওয়া হয়। পরে এই পূর্ণাঙ্গ রায়কে আশ্রয় করে দলীয় সরকারের অধীনে পর পর তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে ছিলেন শেখ হাসিনা।
ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রক্রিয়া যেমন
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের ২ক পরিচ্ছেদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) ও ৫৮(ঙ) অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়। ৫৮খ অনুচ্ছেদে বলা ছিল, সংসদ ভেঙে গেলে বা মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। এই সরকারের মেয়াদ হবে অনধিক ৯০ দিন।
৫৮গ অনুচ্ছেদটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে। এতে বলা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা ও অনধিক ১০ জন উপদেষ্টা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি ক্রমভিত্তিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো—প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের ক্রমে ছিলেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। যদি তিনি সম্মত না হন, তবে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে বয়সে জ্যেষ্ঠতম যিনি, তিনি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনিও সম্মত না হলে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে বয়সে জ্যেষ্ঠতম জন প্রধান উপদেষ্টা হবেন। যদি এই পদ্ধতিগুলো ব্যর্থ হয়, তবে রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে অগ্রসর হবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক অনধিক ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করা হতো। যদি কোনো প্রক্রিয়াতেই প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ সম্ভব না হতো, তবে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিধান ছিল। আর উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতায় বলা ছিল, একজন ব্যক্তিকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে তাঁর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হবেন না। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না মর্মে লিখিতভাবে সম্মত হতে হতো। আর প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের বয়স ৭২ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল।
৫৮ঘ অনুচ্ছেদ অনুসারে সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার গ্রহণ করলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি ঘটত। প্রধান উপদেষ্টা যদি রাষ্ট্রপতিকে জানাতেন যে কোনো উপদেষ্টা দায়িত্ব পালনে অক্ষম, তবে রাষ্ট্রপতি তাঁকে অপসারণ করতে পারতেন।
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশ : হাইওকোর্ট
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হচ্ছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। গণতন্ত্র বিকশিত হয় একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মূল সংবিধানে না থাকলেও একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের অভিপ্রায়ে ১৯৯৬ সালে তা সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল। ফলে এই ব্যবস্থাটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোরই অংশে পরিণত হয়েছে। কারণ, এই ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৫) জনগণের আস্থার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।’
এই তিনটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামো, নির্বাচনীব্যবস্থার পাশাপাশি জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত। আর ধ্বংসের পরিণতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেন, ‘সর্বশেষ সরকারকে জনগণের আন্দোলনের মুখে বিতাড়িত হতে হয়েছে। সরকারকে বিতাড়িত করতে গিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই না, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে একটি নতুন গণতন্ত্র, নতুন স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশ; যা একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কার্যকর সমাধান চান অ্যাটর্নি জেনারেল
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা-অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গত ২৭ আগস্ট সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী গণতন্ত্রের পথে নেওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে হলে সেটা কখন থেকে কী ফরমেটে আসবে, সেটা আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেবেন। প্রধান বিচারপতিও মনে করেন, এর একটি কার্যকর সমাধান হওয়া উচিত। আমরাও মনে করি, এর একটা কার্যকর সমাধান হওয়া উচিত।’
অন্তর্বর্তী সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো সংকট আছে কি না, এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি কোনো সাংবিধানিক সংকট দেখি না। অন্তর্বর্তী সরকার যেমন সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে আছে, একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা আছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কখন থেকে কার্যকর হবে, সেই গাইডলাইন (নির্দেশিকা) দেওয়ার। এটি আমি কোর্টকে বলেছি, আপনাদের সামনে যখন রিভিউ (এখন আপিল) আছে, এই রিভিউয়ের মাধ্যমে আপনারা যেকোনো প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারবেন।’
জুলাই সনদে তত্ত্বাবধায়ক যেমন
অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ দিয়েছে, এই সনদের ১৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এবং ৫৮(খ), ৫৮(গ), ৫৮(ঘ) ও ৫৮(ঙ) অনুচ্ছেদ হিসেবে নতুন করে যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে সনদে। শুধু তাই না, এই ব্যবস্থাটি কিভাবে গঠন করা হবে এবং প্রধান উপদেষ্টাকে কিভাবে নির্বাচন করা হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ অবসানের কারণে অথবা অন্য যেকোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে এবং অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। সনদে প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে একটি বাছাই কমিটি রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে এই কমিটি গঠিত হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় এটি গঠিত হবে। কমিটি গঠনের ১৪ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য ব্যক্তি বাছাই করতে হবে।
কমিটির সদস্যসংখ্যা হবে পাঁচজন। এতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইনে প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা বাছাইয়ের এই পদ্ধতি ছিল না। এ ছাড়া ত্রয়োদশ সংশোধনীতে প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টাদের বয়স ৭২ বছরে সীমাবদ্ধ থাকলেও জুলাই সনদে তা ৭৫ রাখা হয়েছে। সনদে আরো বলা হয়েছে, এই পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বেছে নেওয়া সম্ভব না হলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও শর্ত দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া যাবে না। যদিও প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতা ধরা হয়েছে ত্রয়োদশ সংশোধনীর ৫৮গ অনুচ্ছেদ অনুসারে। তবে জুলাই সনদের ৩ ধারা বা অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংক্রান্ত ৫৮ক, ২ক পরিচ্ছেদ (৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ ও ৫৮ঙ অনুচ্ছেদ) সংবিধানে যুক্ত হবে, তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।