
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির সামনে ‘ঝুঁঁকিপূর্ণ’ ও ‘সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’ উল্লেখ করে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস এবং সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ থেকে পৃথক দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সিইপিজেডের গঠিত কমিটি তদন্তের কাজে মাঠে নেমে পড়েছে। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার এই তিন বিষয়কে জোর দিয়ে করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি। তবে এখনো কাজ শুরু করেনি ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন, ভবনটির জন্য অগ্নি নিরাপত্তা সার্টিফিকেটের আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আবেদন করার সময় ভবনের নকশা জমা দিতে হয়। এরপর একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করা হয়, যারা নকশা ও স্থাপনার সামঞ্জস্য যাচাই করে। তারপর দেয়া হয় এনওসি। ভবনের মালিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য সময় দেয়া হয়। পরে পরিদর্শনে সব ঠিক থাকলে পারফরম্যান্স সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। কিন্তু এই ভবনের ক্ষেত্রে আবেদন করার পর প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনের সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না। তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান মানবজমিনকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ফায়ার কনসালটেন্টের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। ইতিমধ্যে আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটির অগ্রগতির বিষয়ে জানাতে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও উদ্ধার এই তিন বিষয় নিয়ে আমাদের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির কারখানা ভবনটি সিইপিজেড এলাকার সেক্টর ১-এর রোড ৫-এর অবস্থিত। ওই দুই কোম্পানির কারখানাটিতে মেডিকেল পণ্য, অ্যাপ্রন, মাস্ক ও টুপি উৎপাদন হতো। এসব পণ্য গলে অন্য একটি তরল রাসায়নিকে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আগুন দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলছিল। আটতলা বিশাল ভবনটিতে প্রায় এক হাজার ১০০ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে। দুপুরের খাবারের বিরতিতে থাকায় শ্রমিকরা সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন।
জেহং-এর কর্মী ইয়াসিন বলেন, দুপুরের খাবারের পর একজন মহিলা সহকর্মী তৃতীয় তলায় পোড়া গন্ধ পান। তারা সপ্তম তলায় ঘন কালো ধোঁয়া এবং আগুন দেখতে পান। তারা দ্রুত অন্যদের সতর্ক করেন এবং ভবনটি খালি করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, শনিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন নির্বাপণ করা হয়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে সেখানে লোকজন না যাওয়ার জন্য ব্যানার টাঙানো হয়েছে। আমাদের দু’টি ইউনিট আরও দু-এক দিন সেখানে দায়িত্বে থাকবেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে আগুনের গুজব। এরমধ্যে সমপ্রতি চট্টগ্রাম নগরের বৈদ্যুতিক খুঁটিতে অপটিক্যাল ফাইবারে আগুন লাগার বিষয়টিকে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকে আগুন দেয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। শাহ আমানত বিমানবন্দরের ভেতরে একটা ফ্লাইটেও আগুন ধরেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়।