Image description
আটা-ময়দার মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব

নগরীর ব্যস্ততম চানখাঁরপুল এলাকায় উনুনে বিরামহীন রুটি সেঁকে যাচ্ছেন আরফান উদ্দিন খোকা। তার দোকানে রুটি খেতে চোখমুখে ক্লান্তির ছাপ নিয়ে আসেন ওয়ার্কশপ শ্রমিক মো. আল-আমিন। গল্পের ছলে তিনি জানান, আগে দুই রুটি খেয়ে দুপুর-সন্ধ্যা কাটিয়ে দেওয়া যেত। এখন আর তা করা সম্ভব নয়। কারণ রুটির আকার আগের চেয়ে ছোট হয়ে গেছে। তাই এখন প্রতি বেলায় ৩-৪টা রুটি দরকার হয়। এতে রুটি খেতে তার খরচও বেড়েছে। অনেকটা প্রতিবাদের সুরে দোকানমালিক খোকা বলেন, ‘গম-আটার দাম বাড়লে রুটির আকার আগের মতো দিলে রুটি বিক্রি ছেড়ে পালাতে হবে। আগে ৫০ টাকা ছিল আটার কেজি। তাতে ৮-৯টা রুটি বিক্রি করলে পোষাত। এখন আটার দাম বেড়েছে। তাই প্রতি কেজি আটায় ১২-১৩ পিস রুটি তৈরি করতে হয়।

এ তো কেবল রুটি বিক্রেতা খোকা ও ক্রেতা আল-আমিনের গল্প না। আটার দাম বাড়ায় কারওয়ান বাজার, মুগদা, মান্ডাসহ রাজধানীর প্রত্যেক পাড়া-মহল্লার একই গল্প। বিলকিস আক্তার ৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশে রুটি বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘৪৫ টাকা যখন আটার দাম ছিল, তখন ১ কেজি আটায় ৪ পিস রুটি বানাতাম। প্রতি পিস রুটি ২০ টাকা করে বিক্রি করতাম। এখন আটার দাম বাড়ায় আগের দামেই প্রতি কেজি আটায় ৬-৭ পিস রুটি বানাচ্ছি।’

সরকারি হিসাবে গত এক বছরে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, গত এক বছরে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ময়দার দামও ঊর্ধ্বমুখী। এতে প্রতিনিয়ত রুটির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে আটার দাম ৬ থেকে ১০ টাকা ও ময়দার দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, খোলা ও মোড়কজাত (প্যাকেট) উভয় ধরনের আটা ও ময়দার দামই বেড়েছে। ১৫ দিন আগে মোড়কজাত আটা (দুই কেজি) কেনা যেত ৯০-৯৫ টাকায়। এখন সেই দাম বেড়ে ১১০-১১৫ টাকা হয়েছে। আর খোলা আটার কেজি ৩৮-৪০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫-৪৮ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ আটার দাম কেজিতে ৬ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, কাঁচামাল বা ভ্যাট বাড়লে তাদের হয় দাম বাড়াতে হয়, অথবা পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। অবশ্য ২০২২ সালের পর পণ্যের পরিমাণে আর কমানো হয়নি। বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভ্যাট বাড়ানোর পর পণ্যের পরিমাণ কমানো হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে পণ্যের পরিমাণ কামানো ও দাম বাড়ানো হয়েছিল। মার্কেটে কাঁচা মালের দাম বাড়লেও ভ্যাট পরিশোধের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। সরকারের উচিত হবে, দেশের বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড উৎপাদনকারীদের ওপর ভ্যাট পত্যাহার করে নেওয়া। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘কাঁচা মালের দাম বাড়লে উৎপাদিত পণ্যের আকার ছোট হওয়ার ঘটনা আমাদের পুরোনো সংস্কৃতি। এসব বিষয়ে সরকারের সংস্থাগুলো উদাসীন। আমরা বাণিজ্য, শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আমরা কাজ করছি। মাঠপর্যায়ে এর কোনো প্রভাব থাকে না। মানুষের কষ্টও কমে না।’