
২৮ বছর বয়সী এক নারী—যার নাম ইংরেজিতে ‘বি’ দিয়ে শুরু এবং ‘ই’ দিয়ে শেষ (এই প্রতিবেদনে তাকে বি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে)—নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে “বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল” হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবে বাস্তবে, তিনি আন্তর্জাতিক পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এডাল্ট ওয়েবসাইটগুলোর একটিতে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত তিনি বিশ্বব্যাপী পারফর্মারদের মধ্যে অষ্টম স্থানে রয়েছেন।
তার প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেন ২০২৪ সালের ১৭ মে তারিখে। চলতি অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি মোট ১১২টি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যা একত্রে ২৬৭ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে।
পর্ন ওয়েবসাইটগুলো যেসব বাংলাদেশি নারী পারফর্মার রয়েছেন তারা তাদের পরিচয় ও চেহারা গোপন রাখলেও, বি তার ভিডিওতে মুখ উন্মুক্ত রাখেন এবং তার সঙ্গী— যার নাম ইংরেজিতে ‘এ’ দিয়ে শুরু এবং ‘এম’ দিয়ে শেষ (এই প্রতিবেদনে তাকে এ হিসেবে উল্লেখ)— তার সাথেও একত্রে পর্ন ভিডিওতে হাজির হন।
বি এবং এ কেবল একটি প্ল্যাটফর্মেই সীমাবদ্ধ নন; তাদের ভিডিওগুলো একাধিক আন্তর্জাতিক পর্ন ওয়েবসাইটে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তারা নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাউন্টগুলোকে খুবই পরিকল্পিতভাবে তাদের কনটেন্ট প্রচারের জন্য ব্যবহার করেন।
দ্য ডিসেন্ট অক্টোবরের প্রথম দুই সপ্তাহে বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে অন্তত ৫০টি পোস্ট তালিকাভুক্ত করেছে, যেখানে বি এবং এ-এর পর্নোগ্রাফিক ভিডিওগুলো নানাভাবে প্রচার করা হচ্ছে। তবে এসব পেইজ তারা নিজেরা পরিচালনা করেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণ একটি ফৌজদারি অপরাধ। এই যুগল শুধু নিজেরাই অপরাধই করছে না, বরং অন্যদেরও এই পথে যুক্ত হতে উৎসাহিত করছেন, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে পর্ন ভিডিও বানানো এবং প্রচারের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে।
আমাদের তদন্তে এ-কে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই কার্যক্রমের মূল ব্যক্তি হিসেবে। এ দ্য ডিসেন্ট-কে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তার পর্নোগ্রাফি-সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য কোনো প্রশাসনিক পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হয়নি।
কারা এই ‘সেলিব্রিটি জুটি’?
নিজের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে পোস্ট করা এক ভিডিওতে এক তরুণী— যিনি সাধারণ এক নারীর মতো কুর্তা ও ওড়না পরে আছেন— মাথা সামান্য কাত করে দর্শকদের উদ্দেশে আহ্বান জানাচ্ছেন: “আমাদের প্রাইভেট ভিডিও গ্রুপে কী আছে জানতে চান? নিচে ভিডিওর বিবরণ দেওয়া হলো।”
যারা এধরনের বিষয়ে অভ্যস্ত নন, তাদের কাছে বিজ্ঞাপনটি তেমন কিছু মনে নাও হতে পারে। তবে যারা অভ্যস্ত তাদের জন্য এই ইশারাই যথেষ্ট।
এভাবেই বি এবং এ তাদের একেকটি সোশাল মিডিয়া একাউন্টকে অন্য প্লাটফর্মের দর্শকদের মধ্যে প্রমোট করেন।
দ্য ডিসেন্ট এই পর্নস্টার যুগলকে শনাক্ত করার চেষ্টা করেছে— যারা সম্ভবত বাংলাদেশে নিজেদেরকে উন্মুক্ত রেখে এ ধরনের কাজ করা প্রথম উদাহরণ।
এ-এর জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এই তথ্য অনুসরণ করে দ্য ডিসেন্ট তার গ্রামে যায় এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তার বাড়িটি খুঁজে পায়।
চট্টগ্রামে ‘এ’ এর বাড়ি | ছবি: মারুফ হাসান/দ্য ডিসেন্ট
স্থানীয় এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে জানান, এ-কে তিনি চেনেন।
“হ্যাঁ, সে অন্ধকার জগতের মানুষ। ওর কারণে আমাদের গ্রামের নাম খারাপ হচ্ছে,” বলেন তিনি।
অটোরিকশা চালক এবং এ-এর প্রতিবেশী মো. ফারুক বলেন, “তার পুরো পরিবার বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা অপরাধী পরিবার বলে এলাকায় পরিচিত।”
এ-এর পেশা সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে ফারুক বললেন, “সে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনলাইন ব্যবসা করে। মাঝে মধ্যে মোটরসাইকেলে এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামে আসতে দেখা যায়।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মফিজ যোগ করেন, “তার বাবা এক সময় রিকশা চালাতেন, কিন্তু এখন তাদের আচরণ দেখে মনে হয় যেন তারা কোটি টাকার মালিক।”
দ্য ডিসেন্ট যখন এ-এর বাড়িতে যায়, সেটি তালাবদ্ধ ছিল। পাশের বাড়ির এক নারী জানান, পরিবারটি নিয়মিত সেখানে থাকে না—মাঝে মাঝে অল্প সময়ের জন্য আসে।
অন্যদিকে, বি-এর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা।
এই প্রতিবেদক উল্লেখিত ঠিকানায় গেলে দেখা যায়, সেটি তার প্রথম স্বামীর বাড়ি (অনিবার্য কারণে নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না), যিনি পেশায় জেলে। তার শ্বশুর নিশ্চিত করেন যে, বি তার পুত্রবধূ ছিলেন।
“কিন্তু একদিন সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, আট বছর হয়ে গেছে, আর ফিরে আসেনি,” বলেন বি-এর শশুর।
বি-এর বাবার একই উপজেলার ভিন্ন একটি গ্রামে। মেয়ের বিষয়ে এ প্রতিবেদকের কথা বলতে বিব্রতবোধ করেন বাবা। তিনি জানান, এক বছর আগে তিনি বি-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
“আমরা গত এক বছর ধরে বি-এর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। আমি তাকে ত্যাজ্য করেছি,” বলেন তিনি।
কেন ত্যাগ করেছেন জানতে চাইলে বলেন, “সে আমাদের কোনো কথাই শোনে না।”
এ-এর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন, আর বি-এর বাবা দাবি করেন, তার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। উভয়েরই দরিদ্র পরিবার থেকে আগমন, কিন্তু এখন তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রদর্শিত জীবনযাপন বেশ বিলাসবহুল।
দ্য ডিসেন্ট নিশ্চিত হয়েছে যে, বিগত কয়েক মাস ধরে যুগলটি চট্টগ্রাম শহরে এবং এর পাশের অন্তত দুটি জায়গায় বসবাস করেছেন।
‘আমার পরিবার সব জানে’
“আমার বাবা-মা ও পরিবারের সবাই জানে যে আমরা পর্ন ভিডিও বানাই,” দ্য ডিসেন্ট-কে বলেছেন এ।
পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, গত ২৫ আগস্ট এ-কে মাদক-সংক্রান্ত একটি মামলায় (ধারা ১৫১ অনুযায়ী) গ্রেফতার করা হয়েছিল চট্টগ্রামে আনোয়ারা থানায় দায়ের করা একটি সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে। তবে কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি মুক্তি পান।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তার পর্ন তারকা হিসেবে কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নয় বলে মনে হয়েছে।
এ-কে যখন জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কি বি-কে জোরপূর্বক এই কাজে বাধ্য করেছেন কিনা? এর উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “সব কিছু তো আপনাকে বলব না।”
তবে বি-এর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেখানে বেশ কিছু পোস্ট ও ভিডিও রয়েছে যেখানে তিনি নিজের কাজের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করেছেন।
গত ১১ অক্টোবর, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম উভয় একাউন্টে শেয়ার করা এক পোস্টে বি লিখেছেন:
“আমি এই পথে হাঁটছি কেন? কেউ কি জানতে চায়? আমার জীবনের গল্প বললে, যে কোনো মেয়ে কাঁদবে!”
দ্য ডিসেন্ট একাধিকবার বি-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে, কিন্তু তার ৩৪৫ ডিজিট দিয়ে শেষ হওয়া ফোন নম্বরে কল ও মেসেজের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
“বি আমার স্ত্রী, আমরা কয়েক বছর আগে বিয়ে করেছি,” বলেন এ।
ফোনে সাক্ষাৎকার গ্রহণের নসয় পটভূমিতে একজন নারীর কণ্ঠ শোনা যায়। নারীটি বি কিনা- জিজ্ঞাসা করা হলে এ জানান, বি তার সঙ্গে নেই।
এ-এর তিন ভাই রয়েছেন। বড় ভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড নেই। তবে অন্য দুই ভাই এবং তাদের বাবা অপরাধের রেকর্ড রয়েছে।
পুলিশের তথ্যানুসারে, এ-এর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ডাকাতিসহ মোট আটটি মামলা রয়েছে।
যেভাবে চলছে তাদের কার্যক্রম
আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, বি-এর নামে তৈরি একটি যৌথ টেলিগ্রাম চ্যানেল ২২ মে ২০২৪ সালে খোলা হয়, যেখানে বর্তমানে প্রায় ২,০০০ সদস্য রয়েছেন। দ্য ডিসেন্ট নিশ্চিত হয়েছে যে, এই চ্যানেলটি বি এবং এ যৌথভাবে পরিচালনা করেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চ্যানেলটি খোলা হয়েছে বি-এর নামে নিবন্ধিত একটি রবি নম্বর (শেষ তিন সংখ্যা ৩৪৫) ব্যবহার করে, এবং মূল এডমিন হিসেবে কাজ করছেন এ, যার রবি নম্বরের শেষ তিন সংখ্যা ৫৮৪।
এই চ্যানেলে নিয়মিত তাদের পর্নোগ্রাফিক ভিডিও সংক্রান্ত কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর এ একটি পোস্টে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: “নতুন ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, উপভোগ করো ছেলেরা।”
প্রতিবার নতুন ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা লিংকটি ওই চ্যানেলে এবং অন্যান্য সোশাল প্লাটফর্মের তাদের একাউন্টে শেয়ার করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দ্য ডিসেন্ট প্রায় ৭০টি ভিডিও লিংক সংগ্রহ করেছে, যা বিভিন্ন পর্ন ওয়েবসাইটে তাদের প্রোফাইল থেকে এসেছে।
২৪ মে ২০২৫ সালে এ টেলিগ্রামে দুটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে একটি পর্ন ওয়েবসাইটের একাউন্ট থেকে ১,৫০,০০০ টাকার সমপরিমাণ লেনদেনের স্ক্রিনশট দেখা যায়। তিনি ক্যাপশনে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: “টাকাই শক্তি।”
১৪ জুন ২০২৫-এ, তিনি বি-এর পর্ন প্রোফাইলের ড্যাশবোর্ডের একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে ২০২৪ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় দেখা যাচ্ছে ১৫,৭০৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ২০ লাখ টাকা)।
এক সপ্তাহ পর, ২১ জুন, তিনি আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল: “একটি ভিডিও থেকে আয় ১,০০,০০০ টাকা,” এবং প্ল্যাটফর্মটিকে ধন্যবাদ জানান।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এগুলো বিচ্ছিন্ন পোস্ট নয়। একই গ্রুপে বি ও এ আরও অন্তত দশটি পোস্টে তাদের আয়ের স্ক্রিনশট দেখিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।
১২ অক্টোবর এ টেলিগ্রাম গ্রুপে বি-এর ফেসবুক ড্যাশবোর্ডের ছবি শেয়ার করেন। পরবর্তীতে আমাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা সেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করেন, যা আসলেই বি ও এ পরিচালনা করে।
রিভার্স সার্চের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকেই প্রথম কনটেন্টগুলো এসেছে।
বি-এর ফেসবুক আইডিতে প্রায় ৪৯,০০০ ফলোয়ার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১২,০০০-এরও বেশি অনুসারী রয়েছে। উভয় একাউন্টের বায়ো অংশে তিনি নিজেকে পর্ন ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন, সরাসরি তার ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করেছেন এবং দাবি করেছেন, “বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান মডেল।”
২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ৩৫৬টি পোস্ট ছিল, যার প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল ৩ মে ২০২৪ সালে। এই পোস্টগুলোর অনেকগুলোতেই তার পর্ন কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে এবং অনুসারীদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিতে আহ্বান করা হয়েছে।
অন্য পোস্টগুলোতে তিনি বিলাসী ও স্বাধীন জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রায়ই মাদক ও গাঁজার মতো উপকরণ দেখা যায়।
১০টির বেশি পোস্টে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের ছবি দেখা গেছে, এবং প্রায় সমান সংখ্যক পোস্টে মোটরবাইক ও প্রাইভেট কারের ছবি রয়েছে। প্রায় সব পোস্টেই টাকা এবং নিজের বড় আয়ের প্রসঙ্গ সামনে আনা হয়েছে।
এই পোস্টগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিতে।
চট্টগ্রাম শহরের এক শো-রুম থেকে বাইক কিনে ছবি তুলেছে ‘এ’ এবং ‘বি’ | ইনস্টাগ্রাম আইডি
‘আমার সাথে কাজ করতে চাও?’
গত ৮ জুন, এক কিশোর তার ছবি পোস্ট করে টেলিগ্রাম গ্রুপটিতে লিখেছেন তিনি ‘আগ্রহী’। সেদিনই তিনি নিজের নগ্ন একটি ভিডিও আপলোড করেন ওই গ্রুপে।
৯ জুন, একই কিশোর আরেকটি ভিডিও শেয়ার করে লেখেন: “আমি তোমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই,” এবং বি-কে ট্যাগ করেন।
একজন ব্যবহারকারী যার আইডির নাম সাজ্জাদ লিখেছেন: “আপনার যদি ছেলেমানুষ দরকার হয়, আমাকে নিন, আমি কাজ করব।”
আরেকজন যার আইডির নাম ‘আরকে’, জিজ্ঞেস করেছেন: “আমরাও ভিডিও বানাতে চাই, কীভাবে করব?” এসকে সোহেল জানতে চান: “আমরাও কি তোমাদের মতো আয় করতে পারি?”
জবাবে এ বলেন: “ইয়েস।”
আমরা এসব আগ্রহ প্রকাশকারীদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এত টাকা দেখে কেউ স্থির থাকতে পারে না।”
এসব মনোভাব থেকে বুঝা যায় এই ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশি তরুণদের অনেকের আগ্রহ রয়েছে।
নতুনদের যুক্ত করলে মুনাফা
পর্ন ওয়েবসাইটগুলো কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের অর্থ প্রদান করে, আবার নতুন সদস্য যোগ করার জন্য রেফারেল ইনসেনটিভও দেয়।
“আমরা যদি নতুন ক্রিয়েটর যোগ করতে পারি, ওয়েবসাইট আমাদের ডলারে বোনাস দেয়,” দ্য ডিসেন্ট-কে বলেন এ।
২৪ মে এ দুটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে একটি ওয়েবসাইটের একাউন্ট থেকে বিভিন্ন উপায়ে আয়ের প্রমাণ দেখানো হয়। পোস্টের নিচে তিনি লেখেন: “রেজিস্ট্রেশন করতে চাইলে ইনবক্স”।
১৮ জুন তিনি আরেকটি পোস্টে লেখেন: “যে কেউ টাকা আয় করতে চাও, ইনবক্স করো।”
পরে, ২৮ জুলাই বি পোস্ট করেন: “মডেল এড করো, ৫৫ ডলার ফ্রি। আগ্রহী হলে ইনবক্স করো।”
এই বার্তাগুলো থেকে স্পষ্ট যে, তারা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে নতুনদের তাদের সাথে যুক্ত করতে সংগঠিতভাবে কাজ করছে।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আমাদের এক নারী সহকর্মী নিজের পরিচয় লুকিয়ে এ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং জানান তিনি ভিডিও বানাতে আগ্রহী। পরে এ তাকে হোয়াটসঅ্যাপে কল করতে বলেন। তিনি কিছুটা দেরি করলে, এ নিজেই দু’বার ফোন করেন।
এরপর এ জিজ্ঞেস করেন, “আপনি অবিবাহিত না বিবাহিত?” নারী সাংবাদিক বলেন, “অবিবাহিত।”
এ উত্তর দেন, “চিন্তা করার কিছু নেই, আমরা সব ব্যবস্থা করে নেব।”
যখন আর্থিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়, এ বলেন, “টাকার কোনো সমস্যা হবে না।” তিনি ওই নারী সাংবাদিকের ভোটার আইডির ছবি চান এবং পরে ভিডিও কলে মুখ দেখাতে বলেন।
তৈরি করা হচ্ছে নেটওয়ার্ক
“গত বছর মার্চের দিকে আমি টেলিগ্রামে এক ভারতীয় ব্যক্তির সঙ্গে পরিচিত হই। সে আমাকে অনলাইনে শিখিয়েছিল কীভাবে ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে আয় করা যায়। তখনই আমি একাউন্ট খুলে ভিডিও আপলোড শুরু করি,” বলেন এ।
দ্য ডিসেন্ট স্বাধীনভাবে এই ভারতীয় নাগরিকের সম্পৃক্ততার বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি।
২৩ মে এ টেলিগ্রামে দুটি ছবি পোস্ট করেন ক্যাপশনসহ: “নতুন ক্রিয়েটর—সাপোর্ট ও সাবস্ক্রাইব।”
প্রথম ছবিতে দেখা যায় এক নারী (যিনি বি নন) একটি প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন, যেখানে ওয়েবসাইট ও চ্যানেলের নাম লেখা। দ্বিতীয় ছবিতে চ্যানেলের ড্যাশবোর্ডে ২৭ মার্কিন ডলার আয়ের তথ্য দেখা যায়।
অনুসন্ধানে আরও অন্তত পাঁচজন পর্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, যাদের বেশিরভাগ চট্টগ্রামভিত্তিক। তবে বি ও এ-এর মতো তারা মুখ দেখাননি, ফলে তাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি তৈরি, বিতরণ বা সংরক্ষণ করা অপরাধ; এ জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
এই সুস্পষ্ট আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, এ কেবল তার অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন না, বরং বি-কে বৈশ্বিক পর্ন বাজারে বড় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে।
বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার অপরাধ দমনকারী একাধিক ইউনিট থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ এবং বি-এর সক্রিয় উপস্থিতি সত্ত্বেও তারা এই ক্রমবর্ধমান বাজার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
যখন জিজ্ঞেস করা হয়, “আপনার কাজ তো বাংলাদেশে অপরাধ হিসেবে গণ্য—কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ঝামেলা করেছে?” এ বলেন, “না, কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।”
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্প এলাকা ও ডিবি) মো: রাসেল দ্য ডিসেন্ট-কে বলেন, “আমরা এ ও বি-এর কর্মকাণ্ড বা এ ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে অবগত নই।”
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি।