Image description
মরণপথে ইতালি যাত্রা

স্বপ্ন ছিল একদিন গিয়ে পৌঁছবে ইতালি। ঘোচাবে পরিবারের অভাব-অনটন, হাসি ফোটাবে পরিবারের সদস্যদের মুখে। কিন্তু তা আর হলো না। লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরেই যেন তলিয়ে গেল সেই স্বপ্ন। এখন নিখোঁজ প্রতিটি পরিবারে বইছে কান্নার রোল। এসব যুবকের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনো অজানা। তারা আদৌ বেঁচে আছেন, না মারা গেছেন তার সঠিক কোনো তথ্য নেই কারও কাছে। তবে এত কিছুর পর এখনো হবিগঞ্জ জেলায় সক্রিয় রয়েছে মানব পাচার সিন্ডিকেট চক্র। চক্রের সদস্যরা গ্রামের সহজ সরল মানুষকে কথার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে লিবিয়া হয়ে ইতালি পাঠানোর নামে দিয়ে যাচ্ছে নানা প্রলোভন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিবিয়া থেকে স্বপ্নের দেশ ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে ১৬ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন হবিগঞ্জের ৩৫ যুবক। তারা গত ১ অক্টোবর লিবিয়া প্রবাসী জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামের চিহ্নিত দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লার মাধ্যমে একটি নৌকায় করে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এরপর থেকে তাদের আর খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা তলাবপাড়া মহল্লার আলফাজ মিয়া রনি, মোজাক্কির আহমেদ, সিয়াম জমাদার ও মিজান আহমেদ। একই উপজেলার শ্রীমঙ্গলকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বাবু ও জুবাঈদ মিয়া। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশার ইমন ও পারভেজ, পশ্চিমভাগের রফিকুল ইসলাম পবলু, হাবিবুর রহমান, সাব্বির, মাহি ওরফে রাহুল, উজ্জ্বল ও পিন্টু এবং নোয়াগড় গ্রামের মো. মোক্তাকির ও রবিউল। এ ছাড়া জেলা সদরের উমেদনগর, বানিয়াচংয়ের উত্তর সাঙ্গরসহ বিভিন্ন এলাকার যুবক রয়েছেন। এর মধ্যে নিখোঁজের তালিকায় শুধু পশ্চিমভাগ গ্রামের ছয় যুবক রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৭-২০ লাখ টাকা নিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লার।

পশ্চিমভাগ গ্রামে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদ। প্রিয় সন্তান ও ভাইয়ের ছবি বুকে নিয়ে কান্না করে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন পিতা-মাতাসহ স্বজনরা। নিখোঁজ যুবক সাব্বিরের পিতা আবদুল ওয়াহেদ জানান, প্রায় তিন মাস আগে সন্তানকে দালাল হাসান মোল্লা ওরফে সামায়ূন মোল্লার মাধ্যমে লিবিয়া পাঠান। পরে তার কথা অনুযায়ী সাব্বিরকে ইতালি পাঠানোর উদ্যোগ নেন। একপর্যায়ে কষ্টের জমানো টাকা, এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ, বাড়ির জায়গা-জমি ও গরু ছাগল বিক্রি করে হাসান মোল্লাকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। গত ১ অক্টোবর সাব্বিরকে নৌকা যোগে ইতালি পাঠিয়েছে বলে হাসান মোল্লা তাকে জানিয়েছেন। কিন্তু তার পর থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই পরিবারের। এদিকে ৩৫ যুবকের নিখোঁজ হওয়ার পরও চিহ্নিত দালাল হাসান আশরাফ ওরফে সামায়ূন মোল্লার কার্যক্রম থেমে নেই। তার গড়ে তোলা মানব পাচার চক্রের সিন্ডিকেট সদস্যরা এখনো সক্রিয়। তারা এলাকায় সাধারণ মানুষকে ভুলভাল বুঝিয়ে ইতালি নেওয়ার নামে দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রলোভন। এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে বেশ কয়েকজন যুবক নিখোঁজ হয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি। যদিও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সদস্যদের পরিবার থেকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ পাইনি।