Image description
 

আওয়ামী লীগ আমলে নেত্রকোনা জেলায় শতভাগ পাশে গোল্ডমেডেলপ্রাপ্ত ও জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবেও পরপর তিনবার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দুর্গাপুর উপজেলার অন্তর্গত আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজটিতে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার ২.৮%।

 

স্বৈরাচার হাসিনা পতনের পর নকল সরবরাহের একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরীক্ষাকেন্দ্র বদলের পর এবার ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ থেকে নেমেছে এসেছে ২.৮ শতাংশের কোটায়। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ১০৭ জনের মধ্যে ১০৪ জন শিক্ষার্থী ফেল করেছে। পাশ করেছে মাত্র ৩ জন।

আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই কলেজটি যেমন পরপর তিনবার নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজের পদক সংগ্রহ করেছে, তেমনি কলেজটির অধ্যক্ষ মোছাঃ কামরুন্নাহার ও তাঁর স্বামী কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদারও একাধিকবার নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ অধ্যক্ষ বনে যান।

 

এই চক্রটির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই চলমান । অভিযোগের কেন্দ্রে আছেন প্রতিষ্ঠানটির গভর্ণিং বডির সভাপতি দাপুটে আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার, যিনি একইসাথে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে আছেন এবং ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রকোনা ১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনের আওয়ামী মনোনয়ন প্রত্যাশী এমপিপ্রার্থী ছিলেন। আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র তিনি যেই কলেজের অধ্যক্ষ সেই দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে তার ইচ্ছেমতোভাবে আসন বিন্যাস করে দীর্ঘদিনধরেই নকল/ অনৈতিক সুবিধা দিয়ে আসছেন।

তার প্রতিষ্ঠিত আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজকে অসাধু উপায় অবলম্বন করে নাম-ডাক বৃদ্ধি করে শিক্ষা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ায় তার প্রধান লক্ষ্য। তার ব্যবসায়িক স্বার্থে আঘাত লাগলে বিএনপি-জামায়াত, রাজাকার বা পাকিস্তানি দোসর ট্যাগ দিয়ে স্থানীয় বিপথগামী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ, নবীনলীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে মানববন্ধনেরও অভিযোগ রয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা অধ্যক্ষ ফারুক আহম্মদ তালুকদারের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে জানতে দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বজলুর রহমান আনসারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি এই এলাকায় এসেছি খুব বেশি দিন হয় নি। তবে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার অনিয়মের বিষয়টা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। ওই কেন্দ্রে মফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের শিক্ষার্থীদের নকল ও অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছিলো আমি তৎক্ষণাৎ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ওই কেন্দ্রে এক্সপেল করি। আমি শুধু চেয়েছিলাম সুষ্ঠু ও সততার সাথে যাতে পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয়। অথচ অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার কিছু শিক্ষার্থীকে লেলিয়ে দিয়ে আমার অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনে দাড় করিয়ে দেয়। "

 

আওয়ামী ক্ষমতায় দুইদুইবারের এমপি প্রার্থী অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার নিজের স্ত্রী মোছাঃ কামরুন্নাহারকে নিবন্ধন সনদ জালিয়াতি করে প্রথমে প্রভাষক বানিয়ে পরে কলেজটির অধ্যক্ষ পদে বসান।

অবৈধ নিয়োগ, যোগ্যতা না থাকাস্বত্বেও পদায়ন, নিয়োগ-বাণিজ্য, অর্থ-আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আছে ফারুক আহমেদ তালুকদারের বিরুদ্ধে। সুসং কলেজ সরকারিকরণের সময় ২০১৪ সালের মাউশির পরিদর্শন প্রতিবেদনে প্রমাণ মেলে প্রভাষক পদে নিয়োগকালীন সময়ে তার কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলো না, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তিনি আওয়ামী ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসে যান। স্বামী-স্ত্রী দুই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই অবৈধ নিয়োগ, সনদ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তারা আওয়ামী ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ তদবিরে নেত্রকোনা জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ অধ্যক্ষ পদকসহ বিভিন্ন পদ-পদবী লাভ করেন করেন বিভিন্নসময়ে।

 

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পতনের পর এইচক্রটির অনিয়মের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে মুখ খোলেন "সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চ" নামের স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটি দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন।

এইকারণে মঞ্চের আহ্বায়ক, তরুণ লেখক ও গবেষক কাজী আশফিক রাসেলকে প্রাণনাশের হুমকিসহ ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

সর্বশেষ ২০ মে ২০২৫ তারিখে দুর্গাপুরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় অর্ধশতাধিক স্থানীয় নাগরিক কর্তৃক কলেজটির পরীক্ষাকেন্দ্র দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে স্থানান্তরের আবেদন জানালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ কর্তৃক কেন্দ্র পরিবর্তন হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে অভিযুক্ত এই চক্রটির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও শিক্ষামন্ত্রণালয় নির্দেশে তদন্ত চলছে।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবু তাহের এই তদন্তকার্য পরিচালনা করছেন। অতীতেও চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় তদন্ত চললেও অবৈধ টাকা, প্রশাসনিক নেটওয়ার্ক ও রাজনৈতিক গোপন যোগসাজশের কারণে এখনো বহাল তবিয়তে আছে অভিযুক্তরা। এনিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, "একটি কলেজ যা কিনা পরপর কয়েকবার শ্রেষ্ঠ কলেজের পদক পেয়েছে, সেখানকার অধ্যক্ষরাও শ্রেষ্ঠঅধ্যক্ষের পদক পেয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিবর্তনের ফলে হঠাৎ এত শোচনীয় ফলাফল প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ গলদ আছে এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত জানাতে পারবো।"