
তাইওয়ান ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর হস্তক্ষেপ হলে চীন হয়তো রাশিয়ার মতোই ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল’ বা এমনকি পারমাণবিক সংঘাতে জড়াতে পারে—এমন আশঙ্কা বাড়ছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
সম্প্রতি সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে বলেছে, বেইজিংয়ের দ্রুত বিকাশমান ও বহুমুখী পারমাণবিক সক্ষমতা এখন নতুন উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি।
গত ৩ সেপ্টেম্বর তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে চীন তিনটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে—জেএল-১ বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক মিসাইল, জেএল-৩ সাবমেরিন-নিক্ষেপযোগ্য আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ডিএফ-৬১ স্থলভিত্তিক আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রদর্শনী চীনের সম্ভাব্য ‘পারমাণবিক ত্রিভুজ শক্তি’র ইঙ্গিত বহন করছে—যা আকাশ, স্থল ও সমুদ্র—তিন মাধ্যমে পারমাণবিক হামলা চালানোর সক্ষমতা দেয়। এর আগে চীনের বিমানভিত্তিক পারমাণবিক আঘাতের সামর্থ্য ছিল না।
এমআইটির সিকিউরিটি স্টাডিজ প্রোগ্রামের গবেষক এরিক হেজিনবথাম বলেন, চীনের উন্নত কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র—বিশেষ করে ডিএফ-২৬—ওয়াশিংটনের কাছে আরও ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রতিরোধ হিসেবে ধরা পড়তে পারে।
তার মতে, এসব অস্ত্র চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য কৌশলগত পারমাণবিক হামলার জবাব দিতে বাস্তবসম্মত বিকল্প দেয়।
হেজিনবথাম বলেন, ‘এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থাকা সামরিক আধিপত্য কমে যায়’।
‘এটি চীনকে এমন অবস্থানে দাঁড় করায়, যেখানে তারা তাইওয়ান নিয়ে প্রচলিত যুদ্ধেও কম পারমাণবিক প্রতিশোধের ভয় নিয়ে এগোতে পারে’, যোগ করেন তিনি।
তাইওয়ান সিকিউর অ্যাসোসিয়েট করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়াং তাই-ইয়ুয়ান সতর্ক করে বলেন, এই পারমাণবিক উন্নয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে তাইওয়ানের পক্ষে সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে রাশিয়ার পারমাণবিক ভয় দেখানোর কৌশল শিখে থাকতে পারে। তারা তাইওয়ান প্রণালি বা অন্য আঞ্চলিক বিরোধে যুক্ত হওয়া বৃহৎ শক্তিগুলোকে ভয় দেখাতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিতে পারে।’
ইয়াং আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ানের পক্ষে সৈন্য পাঠায়, তবে চীন পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থানরত মার্কিন বাহিনীকে ভয় দেখাতে তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার ব্যবহার করতে পারে।
‘এমন হুমকি যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই গুরুত্ব সহকারে নেবে এবং তখন তারা সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের বদলে জাতিসংঘের মাধ্যমে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার পথ বেছে নিতে পারে,’ যোগ করেন তিনি।