
রাজশাহীর তানোরে কোচিং সেন্টারে গিয়ে এক শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন কয়েকজন যুবক। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি কোচিং সেন্টারের ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর বার্তা পাঠান। তবে এ অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ।
তানোরের মুণ্ডুমালায় ঘটনাটি ঘটেছে গেল শুক্রবার। এ ঘটনার পর সোমবার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোচিংয়ের শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন তার চেয়ারে বসে আছেন। তখন কয়েকজন যুবক তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন। একপর্যায়ে মো. শাকিব নামের এক যুবক তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুণ্ডুমালা বাজারে অবস্থিত অ্যাডভান্স কোচিং সেন্টারে ঘটনাটি ঘটে। এখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হতো। ভুক্তভোগী শিক্ষকের নাম রোকনুজ্জামান রোকন। মুণ্ডুমালা পৌরসভার মোহাম্মদপুর মহল্লায় তার বাড়ি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোচিং সেন্টারটির পরিচালক।
অভিযুক্ত শাকিবের বাড়ি পৌর এলাকার কাদিপুর মহল্লায়। ঘটনার পর থেকে তিনি এলাকায় নেই। ঘটনার পর থেকে কোচিং সেন্টারটি বন্ধ রয়েছে। সেটিতে শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল।
ভুক্তভোগী শিক্ষক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে কোচিং সেন্টারটি চালাতাম। মুণ্ডুমালায় আরও কয়েকটি কোচিং সেন্টার থাকলেও আমাদেরটি ভালো চলত। সেজন্য ষড়যন্ত্র করে আমাদের কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি নাকি ছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপে আপত্তিকর মেসেজ দিয়েছি। কিন্তু এর কোনো প্রমাণ নেই। এই ছেলেগুলো আগে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ করত। ৫ আগস্টের পর তারা বিএনপি-যুবদল হয়ে গেছে। তারা মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করে এবং কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দেয়। আসলে তাদের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তাহলে মারধরের সময় তো মেয়েরাও থাকত। সেখানে কোনো মেয়ে ছিল না।
রোকনুজ্জামান বলেন, যখন আমাকে মারধর করা হয় তখনও তিনজন শিক্ষক ক্লাশ নিচ্ছিলেন। তারা মুণ্ডুমালা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। পুলিশ এসে আমাকে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। কিন্তু অভিযোগের কোনো প্রমাণ পায়নি বলে আমাকে ছেড়ে দেয়। এখন আমি আমার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে মামলা-মোকদ্দমা করতে যাইনি। ভয়ে কোচিং সেন্টারও খুলতে পারছি না।
মুণ্ডুমালা পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক রেজাউল ইসলাম বলেন, রোকনুজ্জামান আমার পরিচিত। তাকে ভালোই মনে হয়। কেন এ ঘটনা ঘটল তা জানি না। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিএনপি বা যুবদলে কোনো পদ নেই। এমনিই তারা উঠাবসা করতে পারে।
কথা বলার জন্য অভিযুক্ত শাকিবকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তার বাবা মো. ভুট্টু বলেন, ঘটনার ব্যাপারে লোকের মুখে শুনছি। কী হয়েছে সঠিক বলতে পারছি না। যারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিল তারাই বলতে পারবে। আমার ছেলে তো নাই। সে রাজশাহীতে আছে।
মুণ্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কমলেস হেমব্রম বলেন, রোকনুজ্জামান মব জাস্টিসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে তাকে নিরাপদে বের করে এনেছে। আপাতত কোচিং সেন্টার বন্ধ আছে। তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তার সত্যতা আমরা পাইনি। এ ব্যাপারে কোনোপক্ষ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।