Image description

অডিট আপত্তির তথ্য গোপন করে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার পেনশনের অর্থ পরিশোধের চেষ্টা চলছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। বিষয়টি বর্তমানে ইউজিসি চেয়ারম্যানের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই গোপনীয়তার ফলে সদ্য অবসরে যাওয়া ইউজিসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আনোয়ার হোসেনকে কমপক্ষে ১৬ লাখ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে ইউজিসিকে।

সম্প্রতি ইউজিসিতে ২০২২-২০২৩ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করেছে শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর। অডিট রিপোর্টের ৬১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, “নিরীক্ষাকালে আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত নথি, ব্যক্তিগত নথি ও বেতন বিল পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ইউজিসি'র বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের আপগ্রেডেশন প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ইউজিসি'র প্রবিধানমালায় আপগ্রেডেশন সংক্রান্ত কোন বিষয় স্পষ্ট উল্লেখ নাই। ফলে, বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন পদে আপগ্রেডেশন প্রদানে অনিয়ম হয়েছে। উল্লেখ্য যে, একই ধরনের সুবিধা অন্য কোন কর্মকর্তাকে/কর্মচারীকে নিরীক্ষাকালীন সময়ের পূর্বে এবং পরে প্রদান করা হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পূর্ব পদে পুনঃপদায়নসহ বিধি বহির্ভূতভাবে গৃহীত বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাবদ প্রদত্ত অর্থ আদায়পূর্বক বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা করতে।”  

অডিট রিপোর্টে আপত্তির বিষয়টিকে গুরুতর অর্থিক অনিয়ম হিসেবে (Serious Financial Irregularities) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বিধি বহির্ভূতভাবে আপগ্রেডেশন প্রদানের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বলে উল্লেখ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ইউজিসি।

‘আপনি এই তথ্য কোথায় পেলেন? অডিট শাখা একটি গোপনীয় শাখা। এছাড়া আমি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি না। এ বিষয়ে বক্তব্য দেবে ইউজিসি সচিব, দায়িত্বশীল সদস্য অথবা চেয়ারম্যান। আপনাকে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’—নাহিদ সুলতানা, পরিচালক ((চলতি দায়িত্ব), অডিট শাখা

ইউজিসি’র প্রশাসন বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সদ্য অবসরে যাওয়া আনোয়ার হোসেন ১৯৯০ সালের ২১ আগস্ট নিম্নমান সহকারী হিসেবে ইউজিসিতে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালের ১ আগস্ট তিনি অফিস সহকারী পদে পদোন্নতি পান এবং ২০০৫ সালে আপগ্রেডেশন পেয়ে শাখা কর্মকর্তা হন। চাকরিজীবনে তিনি বিধিহির্ভূতভাবে আরও দুটি আপগ্রেডেশন পেয়ে সহকারী পরিচালক ও সিনিয়র সহকারী পরিচালক হন। 

তিনি আরও বলেন, ইউজিসিতে বিধিহির্ভূতভাবে আপগ্রেডেশন পেয়ে ৯ম গ্রেড থেকে ২য় গ্রেড পর্যন্ত অবস্থান করছেন এরকম কর্মকর্তার সংখ্যা ৬০ জনেরও বেশি। তারা সবাই প্রতিমাসে সরকারি কোষাগার থেকে নির্ধারিত বেতনের চেয়ে ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত বেতন নিচ্ছেন। 

সদ্য অবসরে যাওয়া সিনিয়র সহকারী সচিব আনোয়ার হোসনের পেনশন ফাইল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে কমিশনের অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগ থেকে অডিট আপত্তির বিষয়ে মতামত চেয়ে অডিট বিভাগে ফাইল পাঠানো হয়। অডিট বিভাগ থেকে গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৫ অনিয়মিতভাবে শ্রান্তিবিনোদন ভাতা গ্রহণ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন বাবদ ৪টি খাতে মোট ৫৮ হাজার ৫০০ টাকার অডিট আপত্তির তথ্য তুলে ধরে অর্থ, হিসাব ও বাজেট বিভাগের পরিচালক বরাবর ফাইল ফেরত পাঠানো হয়। চাকরি জীবনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ক্যাটগরিতে অডিট আপত্তিভুক্ত আপগ্রেডেশনের বিষয়টি এখানে গোপন করা হয়েছে। অডিট বিভাগ মতামত প্রদানের বিষয়ে বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য এবং চেয়ারম্যানের অনুমোদন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ইউজিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অডিট আপত্তির বিষয়টি অডিট বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করে থাকতে পারে। কেননা, অডিট বিভাগের পরিচালক এবং অতিরিক্ত পরিচালক দুজনই আপগ্রেডেশন পেয়ে বর্তমান পদে অবস্থান করছেন। ভবিষ্যতে পেনশন নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন এমন আশংকা থেকে তারা তথ্য গোপন করে থাকতে পারেন। আর্থিক স্বচ্ছতার স্বার্থে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি ইউজিসির খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।       

আনোয়ার হোসেন-এর পেনশন সংক্রান্ত ফাইলে তথ্য গোপনের বিষয়ে ইউজিসির অডিট শাখার পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) নাহিদ সুলতানা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আপনি এই তথ্য কোথায় পেলেন? অডিট শাখা একটি গোপনীয় শাখা। এছাড়া আমি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তি না। এ বিষয়ে বক্তব্য দেবে ইউজিসি সচিব, দায়িত্বশীল সদস্য অথবা চেয়ারম্যান। আপনাকে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না।’

জানতে চাইলে ইউজিসির অডিট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা খতিয়ে দেখব। আগামীকাল বুধবার (১৫ অক্টোবর) ইউজিসিতে গিয়ে বিষয়টি খোঁজ নেব।’ 

এদিকে, গত জুন মাসে বিভিন্ন সময়ে ইউজিসিতে ঘটা অনিয়মের তথ্য দিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। শ্বেতপত্রটি একটি ই-মেইলের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়সহ একাধিক দপ্তর ও গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো হয়। শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল, বিগত বছরগুলোতে নিয়োগ, পদোন্নতিতে অনিয়ম ও বিধিবহির্ভূত পদোন্নয়নের ফলে কম্পিউটার অপারেটর বা তৃতীয় শ্রেণির অন্য কোনো পদে কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়ে অনেকেই বিধিবহির্ভূত পদোন্নয়ন নিয়ে হয়ে গেছেন তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা। যেটি ইউজিসি প্রবিধানমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যার ফলে প্রশাসনিক অরাজকতা তৈরি হয়েছে ইউজিসিতে।