
সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ের (জিএমও) দক্ষিণ শাখার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি বাসায় বিনা ভাড়ায় দীর্ঘ এক যুগ বসবাস ও একই কর্মস্থলে টানা ১২ বছর চাকরির অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ঘনিষ্ঠ নেতা থাকলেও সম্প্রতি তিনি সোনালী ব্যাংক জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি হয়েছেন, যা বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাশেদুল ইসলাম ২০১৪ সালে সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জিএমও (উত্তর) কার্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর একই স্থানে দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি থাকতে পারেন না। তবুও ২০২৩ সালের আগস্টে তাকে বদলি করা হয় একই ভবনের অন্য অফিস—জিএমও দক্ষিণে। ফলে তিনি কার্যত ১২ বছর একই জায়গায় রয়েছেন।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রাশেদুল ইসলাম হাউজ বিল্ডিং ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করায় সরকারি বাসা পাওয়ার যোগ্য নন। তবুও তিনি ২০১৪ সাল থেকে চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের পেছনে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলোনীতে বসবাস শুরু করেন।
সেখানে প্রায় এক দশক থাকার পর চলতি বছরের মে মাসে তিনি অফিসার্স কলোনীর ‘সি’ ভবনে ওঠেন—যা প্রকৌশলী সনেট মল্লিকের নামে বরাদ্দকৃত বাসা।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিনা ভাড়ায় বাস করছেন এবং কলোনির আঙিনা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন।
নিজের নামে বরাদ্দকৃত বাসায় অন্যজন কেন থাকছেন জানতে চাইলে প্রকৌশলী সনেট মল্লিক কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।
মো. রাশেদুল ইসলাম অন্যের বাসায় অবৈধভাবে থাকার কথা স্বীকার করে আমার দেশকে বলেন, আমি জিএম এর মাধ্যমে কিছুদিন স্টাফ কলোনীতে ছিলাম। বর্তমানেও সনেট মল্লিকের নামে বরাদ্দকৃত বাসায় থাকছি। কিছুদিন পর বাসাটি ছেড়ে দিব। আসলে আমি হাউজ বিল্ডিং লোন গ্রহণ করাতে বাসা পাইনি। আমি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত ছিলাম না। কলোনির কোনো আঙিনা তিনি কাউকে ভাড়া দেননি বলেও দাবি করেন।
বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা জানান, রাশেদুল ইসলাম আগে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও আওয়ামী লিগপন্থি সংগঠন সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে তিনি জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি হন।
তারা অভিযোগ করেন, নতুন কমিটিতে আওয়ামী লিগপন্থি কর্মকর্তাদের রাখা হয়েছে। এতে চারজন পদাধিকারী পদত্যাগও করেছেন।
আওয়ামী লিগপন্থি এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাশেদুল ইসলাম আমাদের সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি প্রেস রিলিজ লিখতেন, অনুষ্ঠান করতেন। এখন কীভাবে জিয়া পরিষদের সভাপতি হলেন, বুঝতে পারছি না।’
তিনি আরো জানান, রাশেদুল ইসলাম পূর্বে জিএমদের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে নানা সুবিধা নিয়েছেন এবং হাউজ লোন সনদের নামে অর্থ লেনদেন করেছেন।
সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (জিএমও দক্ষিণ) মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘স্টাফ কলোনী পরিত্যক্ত, সেখানে কেউ থাকার কথা নয়। একজনের বাসায় অন্যজন থাকার সুযোগও নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে জিয়া পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র চাকমা বলেন, ‘রাশেদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নন। কারা পদত্যাগ করেছেন, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’
এক যুগ ধরে একই কর্মস্থলে থাকা, বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসা ব্যবহার এবং রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টানোর ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে তীব্র আলোচনা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।