
শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন ঘিরে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। আন্দোলনের মঞ্চে শুধু শিক্ষকরাই নয়, এখন যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা যাদের মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কিছু দল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অংশগ্রহণ কোনো নিছক সহানুভূতি নয়, বরং এটি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামাতের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যেখানে “শিক্ষক সমাজকে ভোট রাজনীতির প্রভাবক” হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে।
শিক্ষকদের পেছনে জামাতের প্রভাব, সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের আন্দোলনের পেছনে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ কিছু সংগঠন নীরবে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। তাদের লক্ষ্য আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে একদিকে সরকারবিরোধী জনমত তৈরি করা, অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে সংগঠন পুনরুজ্জীবিত করা। বিশেষ করে, শিক্ষক সমাজকে আগামী নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল নিয়েছে জামায়াত ও তাদের সহযোগী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো।
শিক্ষকদের আন্দোলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে এবং রাতের মধ্যেই সমাধান না হলে “মার্চ টু সচিবালয়” কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অথচ গত দুই দিন ধরে শিক্ষক ও ছাত্রসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। শুরুতে বলা হয়েছিল, এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন যুক্ত। কিন্তু আজকের ঘটনাপ্রবাহে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। পূর্বে আওয়ামী লীগের সময়ে কোনো প্রতিবাদী ব্যক্তির দাড়ি-টুপি থাকলে তাকে জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। বর্তমানে, সরকার বা বৃহত্তর রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কু-কর্ম প্রকাশ পেলে তা “আওয়ামী লীগ” হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে সাধারণ জনগণ হোক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হোক বা সামরিক বাহিনী হোক।
রাজনৈতিক চরিত্র পরিবর্তন হয়নি। প্রশাসনের দলীয়করণ স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। শতাধিক এমপি, মন্ত্রী ও পুলিশের কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন। এর পেছনে সরকারের অংশ, বিএনপি, এনসিপি ও জামায়াতের অতিরিক্ত ভূমিকা আছে। মাঝে মাঝে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা জামায়াত বা বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আর বলা হয়, যারা অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত নয় তারা দলীয়ভাবে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন থাকে তাদের যাচাই কিভাবে হবে, কে গুম বা খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল না?
সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিচারের বিষয়টি কেন্দ্রবিন্দুতে। বিদেশ থেকে ব্লগার পিনাকী ভট্টাচার্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর মব জাস্টিসের উসকানি দিচ্ছেন। যারা গুম-খুনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা রাজনীতিবিদদের তৈরি। বড় নেতা হতে গেলে প্রশাসনকে কাজে লাগানো, চাঁদাবাজি, খুন-খারাপি এটাই রীতি।
অন্যদিকে, পুলিশ কর্মকর্তা, মেজর, কর্নেল বা ব্রিগেডিয়ার তৈরিতে রাষ্ট্র প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করে। তাদের ট্রেনিং-এ গুম বা খুন শেখানো হয়নি; এসব কৌশল আসে রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে।
সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের প্রধান ভিকটিমদের মধ্যে মাইকেল চাকমার নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি সাজাপ্রাপ্ত, অস্ত্রসহ আটক এবং চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। প্রথম দিন ট্রাইবুনালের প্রেস ব্রিফিংয়ে একই ফ্রেমে মাইকেল চাকমা উপস্থিত ছিলেন এটি পরিকল্পিত ট্রাইবুনাল বলে দাবী উঠেছে। ৫ আগস্টের পর জানা যায়, তিনি নাকি আয়না ঘরে ছিলেন। এই ট্রাইবুনাল কখনোই স্বচ্ছ নয় সংশ্লিষ্টরা এটাই বলছেন।
প্রশাসনের সামনে চ্যালেঞ্জ
প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোথাও সড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে,কোথাও পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, তর্ক-বিতর্ক এমনকি হামলার ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় পুলিশ বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ বা গ্রেফতারের পথে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনাবলীর পরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশেষ করে জামায়াত-শিবির শিক্ষকদের গ্রেফতারের ঘটনাকে “সরকারি দমননীতি” বলে নিন্দা জানিয়েছে।
- নাশকতার আশঙ্কা ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা, নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, আন্দোলনের আড়ালে নাশকতা ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে পুলিশ বলপ্রয়োগে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু একই সময়, প্রশাসন যখন স্বাভাবিক থাকেন তখন রাজনৈতিক নেতারা সেই কর্মকর্তাদের আওয়ামী দোসর, বিএনপি, জামায়াত, “দলীয় দোসর” আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেন।
ফলে প্রশ্ন উঠেছে এতসব সংস্কার ও রাজনৈতিক চাপের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি দলীয়করণের বাইরে থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে?
দেশের প্রশাসনিক কাঠামো কি সত্যিই “রাজনীতিমুক্ত” হতে পারবে?
শিক্ষকদের আন্দোলন তাই শুধু বেতন-বৈষম্যের প্রশ্নে সীমাবদ্ধ নেই; এটি এখন বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও ভবিষ্যৎ নির্বাচনের মাঠে এক নতুন শক্তির পরীক্ষা।