
অবশেষে বাংলাদেশে আসছেন বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ডা. জাকির নায়েক। দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ইসলাম প্রচারক আগামী নভেম্বর মাসে ঢাকায় অংশ নিতে যাচ্ছেন এক বিশেষ ‘মেগা ইসলামিক লেকচার’-এ।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, আগামী ২০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে এই অনুষ্ঠানের সময়, স্থান ও বিস্তারিত সূচি।
মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া চিকিৎসক থেকে ইসলামী চিন্তাবিদে পরিণত ডা. জাকির নায়েকের জনপ্রিয়তা একসময় ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। যুক্তি, বিজ্ঞান ও মানবতার আলোকে ইসলাম ব্যাখ্যা করায় বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেন তিনি। তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে থাকত কোরআন, হাদিস, বাইবেল, বেদ, উপনিষদসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি—যা তাঁকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক অনন্য আলোচকে পরিণত করে।
কিন্তু এই জনপ্রিয়তাই পরিণত হয় বিতর্কের সূচনাতে। ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান হামলার পর ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, হামলাকারীরা নাকি ডা. নায়েকের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। এরপর ভারত সরকার তাঁর সংস্থা Islamic Research Foundation (IRF) নিষিদ্ধ করে এবং তাঁর টেলিভিশন চ্যানেল Peace TV সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
একই সময়ে বাংলাদেশ সরকারও তাঁর বক্তব্য প্রচারের অনুমতি (ডাউনলিংক পারমিশন) বাতিল করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তৎকালীন সরকার ইসলামপন্থীদের ওপর কঠোর অবস্থান নেয়; ফলে ডা. নায়েক কার্যত দুই দেশের সরকারইয়ের রোষানলে পড়েন।
ইসলাম প্রচারে যুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রয়োগ
চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলেও ডা. নায়েক নিজেকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করেছেন ইসলাম প্রচার ও গবেষণায়। তাঁর মতে, “ইসলাম কোনো অন্ধবিশ্বাস নয়; বরং এটি যুক্তি, বিজ্ঞান ও বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।”
তিনি বিশ্বাস করেন, মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন থাকা উচিত নয়। তাঁর বক্তব্যে প্রায়ই শোনা যায়—“আমরা শুধু মুসলিম বলব, বিভিন্ন মাযহাব বা মতভেদ সৃষ্টি করে নিজেদের দুর্বল করা ইসলামের পরিপন্থী।”
নভেম্বরে ঢাকায় ‘মেগা লেকচার’
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ডা. জাকির নায়েকের প্রথম বক্তৃতা। শুধু রাজধানী নয়, ঢাকার বাইরেও কয়েকটি স্থানে তাঁর বয়ান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
আয়োজক সংস্থা আরও জানিয়েছে, ডা. নায়েকের এ সফর কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়; বরং সম্পূর্ণ একটি চ্যারিটি প্রোগ্রাম, যার মূল লক্ষ্য ইসলামী দাওয়াত, শিক্ষা ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার।
দীর্ঘ নির্বাসনের পর তাঁর এই আগমনকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন।