
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে জমজমাট প্রচার চলছে। প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস। শেষ সময়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাকসু ও হল সংসদের প্রার্থীরা। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পাশাপাশি শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরাও ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। চাকসু নির্বাচনে ভোট হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে। ভোট দেয়ার গোপন কক্ষও সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সিনেট কক্ষে এ সভা হয়েছিল। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ চলে গেলেও ফুটেজ সংরক্ষিত থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে মেডিকেল টিম থাকবে। ১৪ অক্টোবর থেকে পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোটের দিনও কেবল পরিচয়পত্র নিয়েই ভোটকেন্দ্রে যাওয়া যাবে।
সভায় ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সব দাবি অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছি। নির্বাচনের দিন চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। তবে আমাদের আসল শক্তি শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বলেন, ভোটের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি প্রবেশপথের মধ্যে ৭টি বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে ২৪টি পয়েন্টে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা বাইরের নিরাপত্তা বিষয়টি দেখব। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুরোধ ছাড়া যে ভবনে ভোট হবে, সেখানে করব না।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের দিন শিক্ষার্থীদের চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শাটল ট্রেনের সূচি বাড়ানো হয়েছে, পাশাপাশি অতিরিক্ত বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন এ সভার সঞ্চালনা করেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোহাম্মদ তৈয়ব চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী বুধবার আবার ভোট হতে যাচ্ছে। এবার মোট ভোটার প্রায় ২৭ হাজার, যার মধ্যে ছাত্রী প্রায় সাড়ে ১১ হাজার।
এবার একজন ভোটার ৪০টি পদে ভোট দেবেন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটকেন্দ্র থাকবে ১৫টি ও বুথ থাকবে ৭০০টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। তবে পদ বেশি হওয়ায় ভোট দিতে সময় লাগতে পারে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলছে, সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ভোটকেন্দ্রের ভিড় ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বলছে, একজন শিক্ষার্থীকে পাঁচটি ব্যালট পেপার দেয়া হবে। এর মধ্যে চারটিতে থাকবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বর। অন্য একটিতে থাকবে হল সংসদের প্রার্থীদের নাম ও ব্যালট নম্বর। এতে ভোটাররা দ্রুত বুঝতে পারবেন কোন ব্যালটে কোন পদ রয়েছে। ভোট গণনা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিডার বা ওএমআর পদ্ধতিতে।
চাকসু নির্বাচনে প্রচারণায় এগিয়ে ছাত্রদল, পিছিয়ে নেই শিবিরও
আকিজ মাহমুদ চবি থেকে জানান, আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকায় ক্যাম্পাসজুড়ে এখন নির্বাচনী উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রচারণায় সরব পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। তবে এর মধ্যেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল (ছাত্রদল) প্রচারণায় এগিয়ে আছে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ইসলামী ছাত্রশিবিরও সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলে সকাল থেকেই দেখা যায় ছাত্রদলের প্রার্থীদের ব্যস্ততা। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের বাসা কটেজেও চলছে জোর প্রচারণা। স্বশরীরে লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি রয়েছে অনলাইন প্রচারণাও। বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল ভিডিও বানিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। প্রচারণায় থাকা ছাত্রদলের একাধিক কর্মী জানান, আমরা গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকাই আমাদের মূল বার্তা।
অন্যদিকে ইসলামী ছাত্রশিবিরও সংগঠিতভাবে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছে ভোট চাইছে। নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় পরিচয়ের বাইরেও অনেককে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্যানেলে জায়গা দিয়েছে বলে তাদের দাবি। অনলাইন অফলাইন প্রচারণাতেও রয়েছে সরব উপস্থিতি। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বলছেন, আমরা গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। ভোটারদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাই।
ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবের আবহ। প্রার্থীরা লিফলেট আর ইশতেহার নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলছেন। বিভিন্ন প্লাটফর্মে চলছে প্রার্থীদের সরাসরি প্রচারণা ও বিতর্কমূলক আলোচনা। শিক্ষার্থীরাও আগ্রহ নিয়ে অংশ নিচ্ছেন এসব প্রচারণায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রদল প্রচারণায় সবচেয়ে দৃশ্যমান, কিন্তু শিবিরও নীরবে নিজেদের ঘাঁটি শক্ত করছে। শেষ মুহূর্তে প্রতিযোগিতা জমে উঠবে বলে মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নিবে তারা এই ক্যাম্পাসে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে কাদের চায়। সাংগঠনিকভাবে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী ছাত্রদলের ইশতেহার নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছে। আমাদের প্রার্থীরাও নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের রাজনীতি শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক নয় বরং সবসময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য চলমান থাকবে। ছাত্রদলের ইশতেহারে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। এখন আমাদের প্রত্যাশিত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যে রায় দিবে সেটাই আমরা মেনে নিব।
বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সব শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর। আমাদের ইশতেহারে ৯টি ফোকাস পয়েন্ট এবং ৩৩ টি সংস্কার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এই ইশতেহার সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের ইশতেহার এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকা- বিবেচনায় আমাদের ভোট দিবে ইন শা-আল্লাহ।