Image description

গাজীপুর হোতাপারা রাস্তায় সুদীপ্ত রয় মুখ চেপে বসে আছেন। কান্না লুকাতে লুকাতেই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানালেন, মাত্রই তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা। আবদুল্লাহপুর চৌরাস্তার ওপরের বিআরটি রোড থেকে স্পেশাল সার্ভিস নামে জামালপুরের বাসে উঠেছিলেন। এর আগে ৩৫০ টাকায় টিকিট কাটেন তিনি। টিকিট বিক্রেতা পাশের এক লোককে তাকে বাসে উঠিয়ে দিতে বলেন। বলা হয় ডিরেক্ট সিটিং বাস সার্ভিস। অথচ ফিটনেস ছাড়া এসব বাসে দেখা যায় নানা স্থানে বাস থামিয়ে লোক নেওয়া হচ্ছে দাঁড়িয়ে। প্রতিবাদ করতেই তার কাছে ভাড়া দাবি করেন কন্ডাক্টর। তিনি টিকিট দেখালে তা ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলেন, এ টিকিট নকল। তাকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। তাদের সার্ভিসের কোনো টিকিট নেই। প্রতিবাদ করতেই যাত্রীকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে বাসটি হোতাপাড়ায় এলে যাত্রী সুদীপ্ত রয়কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। সুদীপ্তকে ঘিরে ততক্ষণে লোকজন জমে গেছে। এ সময় হোতাপাড়া এতিম মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা মো. নাজমুল ইসলাম পাশেই ছিলেন।

তিনি বলেন, এ রোডে প্রায়ই দেখা যায় যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আবদুল্লাহপুর চৌরাস্তার ওপরে বিআরটি রোডে দালালরা অতিরিক্ত দামে ভুয়া টিকিট বিক্রি করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। প্রতিবাদ করলেই অনেক সময় যাত্রীদের মারধর করে রাস্তার পাশে নামিয়ে দেওয়া হয়। 

সরেজমিন গাজীপুর চৌরাস্তায় বিআরটি রোডে দেখা যায় কয়েকটি স্থানে চেয়ার-টেবিল বসিয়ে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট বিক্রেতার কাছে বৈধতা জানতে চাইলে তারা খারাপ ব্যবহার করে। সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় আশপাশের কয়েকজন হকার নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, দীর্ঘদিন থেকে এভাবে ভুয়া টিকিট বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। এখান থেকে কেউ টিকিট কিনবেন না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে হেনস্থা করা হয়। ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, এটি সম্পর্কে অবগত হলাম। যাত্রীদের এভাবে হয়রানি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কোনো অন্যায়-অনিয়ম সম্পর্কে অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর রোডে যাত্রী হয়রানি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, এটি সত্য। সেখানে যাত্রী হয়রানিসহ অবৈধ ফিটনেসবিহীন বাস সার্ভিস চলছে বলে আমি জেনেছি। আরও বিভিন্ন স্থানে এ রকম অপরাধ হচ্ছে বলে আমাদের সংগঠনে অভিযোগ এসেছে। আমরা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে সহায়তা করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধূরী বলেন, ঢাকার বাইরেও সাধারণ যাত্রীরা এমন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন। কেউ যদি আমাদের কাছে এসে বাস নম্বরসহ অভিযোগ করেন আমরা তাকে সাহায্য করি। এ বিষয়ে সরকারকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।