
তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটকের বিষয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেছেন, আমার ওপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। সবচেয়ে বেশি অপমান বোধ করেছি যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে ইসরাইলি বাহিনী মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এটা আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছে। এ অপমানের বিচার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে একথা বলেন তিনি।
শনিবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেঁৗঁছেন তিনি। পরে ভোর সোয়া ৫টার দিকে তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি ফটক দিয়ে বের হন। তাকে স্বাগত জানান তার শুভাকাক্সক্ষীরা। এ সময় তারা ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন বলে স্লোগান দেন।
ইসরাইলি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কঠিন সময় গেছে জানিয়ে শহিদুল আলম বলেন, আমাদের নির্যাতন করা হয়েছে। তখন আমাদের কঠিন সময় গেছে। কিন্তু গাজাবাসীর ওপর যা হয়েছে তার তুলনায় আমাদের এটা কিছুই না। যতদিন ফিলিস্তিন মুক্ত না হবে ততদিন আমাদের সংগ্রাম চলবে।
তিনি বলেন, গাজা এখনো মুক্ত হয়নি। গাজার মানুষ এখনো আক্রান্ত। এখনো তাদের ওপর নির্যাতন চলছে এবং সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাজ শেষ হয়নি। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের শহিদুল আলম বলেন, ইসরাইলের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমার ওপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।
সবচেয়ে বেশি অপমান বোধ করেছি যখন বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখে তা তারা (ইসরাইলি বাহিনী) মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। এটা আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছে। এ অপমানের বিচার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। কোনো দেশ আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করে যেন পার পেয়ে না যায় সেটা আমাদের দেখতে হবে।
ফ্লোটিলায় যাওয়ার পর বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষ আমাদের জন্য দোয়া করেছেন, ভালোবাসা পাঠিয়েছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। টার্কিশ এয়ারলাইন্স আমাকে দেশে আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ জানাই। দেশের সরকার যেভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছে তাদেরও ধন্যবাদ জানাই। আমি আবারও বলব আমাদের আসল সংগ্রাম বাকি আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন মুক্ত না হবে; ততক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। আমি যেতে পেরেছি। অনেকে যেতে পারেননি। যারা যেতে পারেননি, তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি মনে করি আরও হাজারও ফ্লোটিলা গাজায় যাওয়া দরকার।
বিমানবন্দরে শহিদুল আলমকে ফুল দিয়ে বরণ করতে আসেন তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদসহ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তার সহকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে শহিদুল আলম স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ইসরাইল থেকে তুরস্কের ইস্তান্বুুলে পৌঁছেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানান ইস্তান্বুুলে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ইস্তান্বুল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
শহিদুল আলম গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। সুমুদ ফ্লোটিলায় বিশ্বের প্রথিতযশা অনেক অধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মী, রাজনীতিবিদ অংশ নেন। গাজায় পৌঁছানোর আগে একে একে তাদের সবাইকে আটক করে ইসরাইলী বাহিনী। গত বুধবার আটক হন শহিদুল আলম। তাকে একদিন সে দেশের কারাগারে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, ত্রাণ দেওয়ার জন্য তো দেশটিতে শত শত ট্রাক অপেক্ষা করছে। প্রবেশ অধিকার পাচ্ছে না বলে সেই ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না।
বাংলাদেশি এই আলোকচিত্রী বলেন, ইসরায়েলের অবরোধের কারণে সাংবাদিকদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে সেখানকার প্রকৃত চিত্র জানা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের অবাধ যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। আক্রান্ত ফিলিস্তিনবাসীর ওপর হসপিটালে আক্রমণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মী ও মানবাধিকারকর্মীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমরা প্রকৃতপক্ষে এই অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে গিয়েছিলাম। যেখানে ইসরাইল নিজেদের মোরাল আর্মি হিসেবে দাবি করে, সেখানে তারা কীভাবে একটি জাতির ওপর এমন নির্যাতন করছে, এটা আমাদের প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক আইন কীভাবে তারা প্রতিদিন ভাঙছে, এটা আমাদের প্রশ্নের বিষয়।