
ইউরোপে অবৈধ পথে অভিবাসনের হার সামগ্রিকভাবে ২২ শতাংশ কমলেও, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুট ব্যবহার করে প্রবেশকারীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিকরা। ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রনটেক্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ৫০ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) ফ্রনটেক্সের পক্ষ থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, শুধুমাত্র সেপ্টেম্বর মাসেই মধ্য ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন ৮ হাজার ৪৬ জন।
ফ্রনটেক্সের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন মোট ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ জন। ইউরোপীয় সীমান্তে কঠোর নজরদারি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ জোরদারের ফলে সামগ্রিকভাবে অবৈধ অনুপ্রবেশের হার কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশকারীদের মধ্যে শীর্ষ তিনটি দেশের নাগরিক হলেন বাংলাদেশ, মিসর ও আফগানিস্তান।
মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় সাগর পথকে এখনও ইউরোপে অনিয়মিত প্রবেশের প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পুরো ইউরোপে মোট অবৈধ প্রবেশকারীদের প্রায় ৪০ শতাংশই এই রুট দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছে।
ফ্রনটেক্সের তথ্যমতে, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় রুটে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই বাংলাদেশি। যদিও সামগ্রিকভাবে ইউরোপে অবৈধ প্রবেশ কমেছে, তবে কিছু রুটে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। পশ্চিম আফ্রিকান রুটে অনুপ্রবেশ ৫৮ শতাংশ, পশ্চিম বলকান রুটে ৪৭ শতাংশ, পূর্ব ইউরোপের স্থলসীমান্তে ৩৬ শতাংশ এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুটে ২২ শতাংশ হ্রাস পেলেও, পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অনিয়মিত প্রবেশ ২৮ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুটে অনিয়মিত প্রবেশ বেড়েছে ২৮ শতাংশ, যার বেশিরভাগই আলজেরিয়া থেকে যাত্রা করা অভিবাসী।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, অবৈধ পথে ইউরোপে প্রবেশের সংখ্যা কিছুটা কমলেও মানবিক সংকট এখনও গভীর। সংস্থাটির তথ্যমতে, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে কমপক্ষে ১ হাজার ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর এই সংখ্যা প্রমাণ করে, ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য মানুষ এখনও জীবনের ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করছে না।
ফ্রনটেক্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফ্রান্স হয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা ১৪ শতাংশ বেড়েছে, এবং ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৩০০ জন এই পথে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপের সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি এবং আফ্রিকার কিছু দেশে কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে পাচারকারীরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে, যা অভিবাসীদের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শীর্ষনিউজ