Image description

সিলেটে এক সৌদি প্রবাসীর দোতলা বাড়ি বিক্রি নিয়ে নানা নাটকীয়তা চলছে। ঘটনাটি কানাইঘাট সড়কের বাজারে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশ বৈঠকের পর বিষয়টি গড়িয়েছে পুলিশ পর্যন্ত। প্রবাসীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সৌদি প্রবাসী ফারুক আহমদের বাড়ি কানাইঘাটের দর্পনগরে। প্রায় দুই যুগ ধরে সৌদির বাণিজ্যিক শহর জেদ্দায় বসবাস করেন। উপার্জিত টাকা দিয়ে সড়কের বাজারের পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামে ৫২ শতক জমি কিনেন। ওই জমিতে ২০১৩ সালে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। সিলেট পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া আবেদন ও মানবজমিনের কাছে দেয়া বক্তব্যে জানা যায়- প্রবাসী ফারুক আহমদ কয়েক মাস আগে দেশে আসেন। তিনি সিলেট নগরের উপশহরে একটি বাসা ক্রয়ের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ব্রাহ্মণগ্রামে থাকা দোতলা বাড়ি তিনি বিক্রির পর সিলেট শহরে বাড়ি কেনার মনস্থির করেন। এজন্য তিনি সিলেট শহরে বাড়ি দেখার পাশাপাশি ব্রাহ্মণগ্রামের বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। 

ওই বাড়ি বিক্রি করতে এগিয়ে আসেন সড়কের বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল্লাহ সাইদ। কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাড়ি বিক্রির জন্য ৫১ লাখ টাকা দাম সাব্যস্ত হয়। তবে বাড়ির মালিক প্রবাসী ফারুক আহমদ কথাবার্তার সময় জানিয়েছিলেন তিনি শহরের বাসাটি কেনার কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামের বাড়িটি বিক্রি করবেন। আপাতত তিনি দামদর ঠিক করে রাখছেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর আব্দুল্লাহ প্রবাসী ফারুক আহমদকে বাড়ি রেজিস্ট্রি করে দেয়ার তাগিদ দেন। কিন্তু শহরের বাসা না কিনতে পারায় তিনি ব্রাহ্মণ গ্রামের বাড়ি বিক্রিতে অসম্মতিতে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হন আব্দুল্লাহ। জানান- জমি কেনার জন্য স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন। টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন বাড়ি কিনতে না পারলে তার লোকসান হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি সালিশ ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন স্থানীয় দিঘীরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহীন চৌধুরীসহ এলাকার মানুষ। সর্বশেষ সালিশে রায় হয়- আব্দুল্লাহর ক্ষতি পূরণ বাবদ দেড় লাখ টাকা প্রবাসী ফারুক আহমদ প্রদান করবেন। কিন্তু এই রায়ে সন্তুষ্টি হননি প্রবাসী ফারুক আহমদ। তিনি বলেন- জমি বিক্রির কথাবার্তা হয়েছে। কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এখন তিনি কেন দেড় লাখ দেবেন। তিনি সালিশের রায়কে অগ্রাহ্য করেন। 

প্রবাসী আব্দুল্লাহ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- টাকা না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে আব্দুল্লাহ ও তার স্বজন মোনিম তাকে জোরপূর্বক সড়কের বাজার পয়েন্ট থেকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তার ভাই শাহীন আহমদ কানাইঘাট থানার পুলিশ দল নিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে আসেন। অপহরণের ঘটনায় পরবর্তীতে তার ভাই কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা রেকর্ড করেনি। উল্টো পুলিশও বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে শেষ করার তাগিদ দেয়। এ কারণে একজন প্রবাসী হিসেবে তার সঙ্গে চলা অন্যায়ের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। আইনি ভাবে তিনি বিষয়টির মোকাবিলা করতে চান বলে জানান ফারুক। এদিকে- অপহরণের ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ বলে স্বীকার করলেও অভিযুক্ত আব্দুল্লহ সাইদ গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- অপহরণ করা হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। ওই সময় তিনি নিজেই কানাইঘাট থানায় অন্য একটি সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন- জমি ক্রয়ের জন্য তিনি ফারুকের কাছে অগ্রিম ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। ওই টাকা ফারুক ফেরত না দিয়ে বাড়িটি অন্য আরেক জনের কাছে বিক্রি করতে চাইলে তিনি সালিশের কাছে বিচার প্রার্থী হন। প্রবাসীর সঙ্গে কোনো ধরনের অন্যায় আচরণ করা হয়নি বলে জানান তিনি। দিঘীরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহীদ চৌধুরী ঘটনা সম্পর্কে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জমি সংক্রান্ত ঝামেলায় তার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিলেন। সালিশে তিনি শুধু উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় সালিশের বিচারকরা ক্ষতিপূরণ বাবদ আব্দুল্লাহকে দেড় লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন- প্রবাসী জমি বিক্রি বাবদ ৪ লাখ টাকা অগ্রিম নিলেও সেটি পরবর্তীতে তিনি ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহর কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেছিলেন যখন তিনি জমি বিক্রি করবেন তখন টাকা একসঙ্গে নেবেন। এদিকে- ঘটনা সম্পর্কে কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রবাসীকে অপহরণের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ব্যবসায়ীর বাড়িতে পুলিশ ফোর্স পাঠান। সেখানে গিয়ে পুলিশ সালিশ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রবাসীকে বসা দেখেছেন। ফলে অপহরণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। তিনি বলেন- বিষয়টি ভূমি সংক্রান্ত। এ নিয়ে ওই প্রবাসীর সঙ্গে ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহর বিরোধ চলছিলো। এদিকে- প্রবাসীর বাড়ি বিক্রির এই নাটকীয়তা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। বিষয়টি নিয়ে মল্লযুদ্ধে নেমেছেন বিবদমান দু’পক্ষ। প্রবাসী ফারুক জানান- তার সঙ্গে যে অন্যায় করা হয়েছে সেটি সামাজিকভাবে নয়, আইনি ভাবেই তিনি সমাধান চান।