Image description
এখনো শেষ হয়নি মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্রপ্রক্রিয়া । এবারও প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কমে কাজ নেওয়ার পাঁয়তারা । যথাসময়েই সব বই তুলে দিতে আশাবাদী এনসিটিবি ।

চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল । আগামী শিক্ষাবর্ষেও সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের শুরুতে নতুন বই তুলে দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে । কারণ , মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার দরপত্রপ্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি । তবে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ চলছে পুরোদমে ।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ( এনসিটিবি ) সূত্রে জানা যায় , সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ৩২ তম সভায় নতুন শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ , সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র অনুমোদন দেওয়া হয়নি । তাই নতুন করে আবার এই তিন শ্রেণির দরপত্রপ্রক্রিয়া শুরু করেছে এনসিটিবি । আর নবম - দশম শ্রেণির দরপত্র মূল্যায়নের কাগজপত্র এখনো অনুমোদন হয়নি । অবশ্য এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ জানুয়ারির শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আশাবাদী । একই আশা ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদও ।

গত ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন , চলতি বছর নতুন বই তুলে দিতে দেরি হলেও আগামী শিক্ষাবর্ষে জানুয়ারি মাসেই শিক্ষার্থীরা নতুন বই হাতে পাবে । চলতি বছর সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে প্রায় তিন মাস দেরি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার । সে পরিস্থিতির আলোকে এবার আগেভাগেই বই ছাপানোর কাজ শুরু করেছিল এনসিটিবি । কিন্তু অনিশ্চয়তা দানা বাঁধে সম্প্রতি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ , সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্র বাতিলের ঘটনায় । তবে কী কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছে, এনসিটিবিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি । 

সূত্র বলছে , সব মিলিয়ে মোট ২৮০ টি লটের ১২ কোটির বেশি বই । ছাপানোর দরপত্র বাতিল করা হয়েছে । এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ ২১ হাজার ৯০৬ , সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ এবং অষ্টম শ্রেণির ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ টি । দরপত্র বাতিল হওয়া তিন শ্রেণির মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল গত ১৯ মে , সপ্তম শ্রেণির ১৫ মে এবং অষ্টম শ্রেণির ২ জুন ।

সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে। করোনা মহামারি ছাড়া বাকি বছরগুলোতে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই  তুলে দেওয়া হয় । তবে গত বছর বই উৎসব ছাড়াই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয় । আগামী বছরও প্রথম দিনে নতুন বই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এনসিটিবির ।

জানা যায় , আগামী বছরের জন্য প্রাক - প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে ৩০ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭৯ কপি পাঠ্যবই ছাপাতে হবে । এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২১ কোটি ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৪০ ও প্রাথমিক স্তরের জন্য ৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৯ টি রয়েছে । এসব বই ছাপানো ও বিতরণে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি । নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র তিন মাস বাকি ।

কিন্তু এনসিটিবি এবং মুদ্রণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ৫৩৪ টি লটের পাঠ্যবই ছাপানোর দরপত্রপ্রক্রিয়াই শেষ করা যায়নি । তবে প্রাথমিক স্তরের প্রায় ২২ লাখ পাঠ্যবই ছাপা শেষে বিতরণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে ।

এনসিটিবির একাধিক সূত্র জানায় , সাধারণত নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে এই তিন শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপাতে পাঁচ মাস সময়ের প্রয়োজন । যদিও গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে , কোনো কোনো বছর এর চেয়ে সময় লেগেছে ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন , নভেম্বর - ডিসেম্বরে মুদ্রণকারীরা নোট- গাইড ছাপানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে । আবার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোস্টার ছাপানোর কাজও বাড়বে । সব মিলিয়ে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে । এ বিষয়ে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন , অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে , কোনোভাবেই জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না ।

কাজের গতি অনুযায়ী মনে হচ্ছে , সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দিতে অন্তত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত লাগতে পারে । মান নিয়েও রয়েছে শঙ্কা এনসিটিবি সূত্র বলছে , এবার প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপাতে সরকারের সম্ভাব্য ব্যয় ছিল প্রায় সাড়ে চার শ কোটি টাকা । কিন্তু ৬১ টি মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে ৪৩২ কোটি টাকায় । অর্থাৎ সম্ভাব্য ব্যয়ের চেয়েও কম দরে কাজ পেয়েছে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো । একই অবস্থা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রেও ।

সূত্র আরও বলছে , বিলম্বে কার্যাদেশ ও চুক্তি হলে শেষ সময়ে নিম্নমানের কাগজে বই দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে । এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ করার শর্তে বলেন , এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করছে অসাধু মুদ্রণকারীরা । জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ( অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন , “ আশা করছি , যথাসময়েই শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দিতে পারব । আর মানের বিষয়ে এবারও এনসিটিবি কোনো আপস করবে না ।