Image description
আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে ইসিতে দাবি-আপত্তি জমার সময়সীমা

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তালিকাভুক্তির জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার আবেদন আহ্বান করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির গণবিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই তারা পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়েছিল। সেখানে ৩ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। যাচাই বাছাই করে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা করেছে ইসি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর আবেদন করা অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থারই ঠিকানা অনুযায়ী হদিস মেলেনি। দেশীয় মোট ৭৩টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার তালিকা গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে ইসি। ঢাকায় বেশ কিছু সংস্থার দেয়া ঠিকানায় রয়েছে বাসা-বাড়ি, যাদের কেউ পর্যবেক্ষণে জড়িত নন। কোনও কোনও ঠিকানার আবার অস্তিত্বই নেই। কিছু সংস্থার অফিসে চলে অন্য দাফতরিক কার্যক্রম। এসব বিষয় নিয়ে দাবি, আপত্তি, অভিযোগ থাকলে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে তা ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিতভাবে জানাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফায় ৯৬টি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে তালিকাভুক্ত করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ২৯টি সংস্থার নাম প্রকাশ করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দায়িত্ব নেয়া এ এম এম নাসির উদ্দিনের কমিশন বিগত নির্বাচনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্বের সকল সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। পরে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি দিলে তিন শতাধিক অধিক সংস্থা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে।

নির্বাচন কমিশনের ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা’য় বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কাজ করছে এবং নিবন্ধিত গঠনতন্ত্রের মধ্যে এ বিষয়সহ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে তথ্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণের অঙ্গীকার রয়েছে, কেবল সেসব বেসরকারি সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন এমন কেউ পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদনকারী কোনো সংস্থার প্রধান নির্বাহী কিংবা পরিচালনা পর্ষদে থাকলে ওই সংস্থাকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হবে না।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদন করা অনেক সংস্থা এককালীন কাজ করে থাকে যেমন দাতব্য সংস্থার অনুদান বন্টন, বিদেশী সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি বা অংশীদার। এমনও দেখা গেছে যে সংস্থাটি শুধু কোরবানি ঈদে গোস্ত তুলে তা মানুষের মাঝে বন্টন করেন, বিদেশী সংস্থার কাছে গোস্ত নিয়ে তারা কাজ করে। এছাড়াও সামাজিকভাবে নানা এনজিওর সাথে জড়িত আড়ালে ব্যবসায়ী সংস্থাও আবেদন করেছে।

পর্যবেক্ষক সংস্থা ভলান্টারি রুরাল ডেভলপমেন্ট সোসাইটি ইসিতে তাদের দেয়া ঠিকানা হচ্ছে বনশ্রীর ফ ব্লকের ৭ নাম্বার রোডের ৫৯ নাম্বার বাসা। অথচ সেখানে ফ ব্লক বলে কিছুই নেই। এমনকি এফ ব্লকেও নেই ৫৯ নাম্বারের কোনও বাড়ি। আবার দক্ষিণ বনশ্রীতে ১০/৭ নাম্বার রোডে ৫৯ নাম্বারের একটি বাসা পাওয়া গেলেও পর্যবেক্ষক সংস্থার অস্তিত্ব মেলেনি। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ১৬/১৬ বাবর রোডে বিয়ান মনি সোসাইটির ঠিকানা দেয়া। তাতে বিস্তারিত আর কিছু নেই। মোহাম্মদপুরের এই বাড়ির ঠিকানায় গিয়ে দারোয়ানকে প্রশ্ন করতেই জানালেন, তিনি সেখানে বহু বছর ধরে থাকলেও সংস্থাটির নামই শোনেননি। এছাড়াও এমন বিভিন্ন সংস্থার সাথে রাজনৈতিক নেতাদের নাম স্পষ্টতই জড়িত আছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মালিকায় গড়ে ওঠেছে এসব পর্যবেক্ষক সংস্থা। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তালিকায়। এই সংস্থার সম্পাদক ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এখনকার প্রেসিডেন্ট তাসনিম এ সিদ্দিকী। তাঁর স্বামী শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার।

এবিষয়ে নির্বাচন বিশ্লেষক মুনিরা খান বলছেন, এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার অনুমোদনে কমিশনকে সতর্ক হতে হবে। নয়তো এর প্রভাব পড়বে জাতীয় নির্বাচনে। পর্যবেক্ষক সংস্থা হওয়ার ক্ষেত্রে মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে অনুদান প্রাপ্তি। কমিশন যেন সেই অসঙ্গতির উপলক্ষ না হয়। ৫০০ পর্যবেক্ষকও যদি দেয়া হয়, খরচ কে দেবে, তারা নিজেরা দেবে? এই ঠিাকানা দেখে কি মনে হচ্ছে তারা টাকা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করাবে। বিনামূল্যে তো আর কেউ করবে না। এইটা সরকারকে বন্ধ করতে হবে। অনেকেই হয়তো মনে করছে যে একটা নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল করবে এবং দাতাদের কাছে পয়সা চাইবে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে অনেক সংস্থা নতুন ভাবে গড়ে ওঠেছে। যাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে তাদের কোনো বিশেষ কর্মকান্ড আছে কিনা তা তদন্ত করা জরুরি। অনেক সংস্থা পূর্বে কাজ না করলেও তারা মর্যাদা অর্জনের জন্য এই নির্বাচনে অংশ নিতে চাচ্ছে, এখানে দেখতে হবে তাদের পৃষ্ঠপোষক কে বা কারা, দলীয় পরিচয় থাকলে তো আইন অনুযায়ী বাতিল হয়ে যাবে।