Image description

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোডে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল দশা পরিদর্শন করে রাস্তার ওপর নির্ভরতা কমাতে রেল এবং নৌপথের ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু  উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গতকাল দুপুরে তিনি মহাসড়কের ওই অংশ পরিদর্শনে আসেন। সকাল সাড়ে ১০টায় সেখানে পৌঁছার কথা থাকলেও যানজটের কারণে প্রায় ৩ ঘণ্টা পর পৌঁছান। এজন্য তাকে গাড়ি ছেড়ে মোটরবাইকে উঠতে হয়। এদিকে, মহাসড়কে গত ৩ দিন ধরেই দীর্ঘ যানজট। বিশ্বরোড মোড় পেরুতে দিন গড়িয়ে রাত বা সারা রাত পেরিয়ে পরদিন দুপুর হয়ে যায়। মোট কথা ১২-১৩ ঘণ্টা কাটাতে হয় এখানেই। উপদেষ্টার সফরের দিনও একই অবস্থা। গাড়ি নড়ে-চড়ে না। চরম ভোগান্তিতে হাজার হাজার মানুষ। তিনি নিজেও যানজটের ভুক্তভোগী হলেন। তবে এজন্য তিনি সড়কের দোষ নয়, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। 

উপদেষ্টা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সবাই রাস্তা চায়। টু লেন হলে ফোরলেন, ফোরলেন থাকলে সিক্সলেন। রাস্তা করে সমস্যা সমাধান হবে না। রাস্তা যেভাবে হচ্ছে তাতে বাসাবাড়ি করার জন্য জায়গা থাকবে না। শিল্পকারখানা করার জায়গা থাকবে না। কবরে যাওয়ার, কবর দেয়ার জায়গা থাকবে না। সেজন্য রাস্তার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে রেলের ব্যবহার বাড়াতে হবে। নদীর ব্যবহার করতে হবে। সবদিক দিয়ে যেতে হবে। তিনি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন। 

উপদেষ্টা বলেন, হাইওয়ে পুলিশের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, তা পালন করা হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবো। আগে শৃঙ্খলা আনতে হবে। এ জন্য সড়কে ডিভাইডার করে দিবো। এ ছাড়া বর্ষার কথা চিন্তা করে আশুগঞ্জ গোলচত্বর এবং সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের অংশটুকু ঢালাই করে দেয়া হবে। এ ছাড়া সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে উড়াল সেতু করার জন্য ডিজাইন ও প্রকল্প প্রস্তুত করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের ভেরিয়েশন অর্ডার ছিল। সেজন্য অতিরিক্ত টাকা লাগবে। এজন্য ওরা (ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) কাজ বন্ধ রেখেছিল। ভেরিয়েশন এপ্রুভড হয়েছে। টাকা দিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন কাজ করতে সময় লাগবে। প্যাকেজ-১ এর কাজ করতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে। এসময় পর্যন্ত মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে আলাপ করেছি। 

যানজটে পড়ে তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে ট্রাফিক শৃঙ্খলা থাকলে কোনো অসুবিধা হতো না। আমার হয়তো আধা ঘণ্টা সময় বেশি লাগতো। আমার কাছে মনে হয়েছে প্রধান সমস্যা সড়ক নয়। এসময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার এহতেশামুল হকসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

যানজটে পড়ে মোটরসাইকেলে উপদেষ্টা: আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড। দূরত্ব প্রায় ১১ কিলোমিটার। সে পথ আসতে উপদেষ্টার সময় লেগেছে ৩ ঘণ্টা। সকাল সোয়া ১০টার দিকে রওনা হয়ে দুপুর ১টা ৫ মিনিটের দিকে তিনি বিশ্বরোড পৌঁছান। তবে তিনি নিজের গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে করে আসেন। এরআগে প্রায় ২ ঘণ্টা এক জায়গাতেই তার গাড়ি আটকে থাকে। সিক্সলেন-ফোরলেন সড়ক সমপ্রসারণ কাজ দেখতে এসে ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়েন তিনি। সকাল সোয়া ১০টায় আশুগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু করলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টায় তার গাড়ি এগিয়েছে ৩৫ মিটার। বিশ্বরোড সকালে সাড়ে ১০টায় তার পরিদর্শনের সময় নির্ধারিত ছিল। তিনি ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সকাল সাড়ে ৯টায়  ভৈরব পৌঁছান। সেখানে থেকে আশুগঞ্জে পৌঁছে বিশ্বরোডের দিকে যাত্রা শুরু করেন। হোটেল উজানভাটি থেকে দেড় কিলোমিটার গাড়ি চলার পর সোহাগপুরে উপদেষ্টার গাড়িবহর যানজটে পড়ে। সোহাগপুর এলাকাতেই ৩৫ মিটার পথ পেরুতে উপদেষ্টার সময় পেরিয়েছে ২ ঘণ্টা। অবশ্য উপদেষ্টা আসার আগে গত ৩ দিন ধরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে যানজট লেগে আছে। এই মহাসড়কে দিন পেরিয়ে রাতও কাটাতে হচ্ছে হাজার হাজার যাত্রী ও গাড়িচালকদের। 

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. খাইরুল আলম জানান, সকাল সোয়া ১০টায় আশুগঞ্জের হোটেল উজানভাটির সামনে থেকে উপদেষ্টার গাড়িবহর সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিছুদূর এগুনোর পরই উপদেষ্টার গাড়িবহর এবং জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সোহাগপুর এলাকায় যানজটে আটকা পড়েন। হাইওয়ে এবং থানা পুলিশ যৌথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আব্দুল বাতেন নামে গ্রিনলাইন পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রাজারবাগ থেকে বাসে উঠেছিলাম। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পার হতে পারিনি। সারা রাত গাড়িতে বসে কষ্ট করেছি। আমাদের এই ভোগান্তি-কষ্ট কেউ দেখে না। এই কষ্ট প্রতিনিয়ত করতে হচ্ছে আমাদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে যানজট আরও তীব্র হয়েছে। মূলত সড়কের দুরবস্থার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সড়ক পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত যানজট সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান হবে না।