
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে আট দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল, সেখানে ভর্তির প্রথম দিন থেকেই হলে একটি আসন ও একটি পড়ার টেবিল নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আবাসন ছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্ব পেয়েছে ছাত্রদলের ইশতেহারে।
বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ইশতেহার ঘোষণা করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়।
আগামী ১৫ অক্টোবার চাকসু, হল ও হোস্টেল সংসদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।
এক সপ্তাহ আগে ছাত্রদলের প্যানেলের দেওয়া ইশতেহারে শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষার্থী বান্ধব আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়েছে।
একই দিন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ তাদের ৩৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহারে ভর্তি ফি, পরীক্ষার নিবন্ধন, ক্লাস রুটিন, পরীক্ষার ফল জানাসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ‘অনলাইন স্টুডেন্ট পোর্টাল’ চালুর কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া ম্যাটল্যাব স্থাপন এবং গবেষণার প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারকে আধুনিকায়ন করে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা, শহরের ২ নম্বর গেইটে গ্রন্থাগারের শাখা স্থাপন, প্রতিটি হলে ‘রিডিং রুমের’ পাশাপাশি গ্রন্থাগার স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে ছাত্রদলের ইশতেহোরে।
ইশতেহারে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ সংস্কৃতি দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতা বৃদ্ধি, হলে আসন সংরক্ষণ, ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
খাদ্য ও আবাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে বলা হয়, আবাসিক হল, ক্যান্টিন এবং দোকানে মানসম্মত খাবারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করে মান উন্নয়নে ভর্তুকি বাড়ানো হবে।
আবাসনের ক্ষেত্রে ইশতেহারে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে, যাতে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রথম দিন থেকে ‘একটি সিট ও একটি পড়ার টেবিল’ নিশ্চিত করা যায়।
অব্যবহৃত ভবন সংস্কার করে সাময়িক আবাসনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণের কথাও ছাত্রদল তাদের ইশতেহারে বলেছে।
ছাত্রদল বলেছে, নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে সন্ত্রাস, দখলদারি ও ভয়ভীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণ, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ‘গুপ্ত’ হামলার ঘটনায় তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা হবে।
ক্যাম্পাসজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, তাৎক্ষণিক সেবা নিশ্চিতে হেল্পলাইন চালু, সাইবার বুলিং এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা সেল গঠন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংগঠনটির ইশতেহারে।
নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি নজর দিয়ে ছাত্রদল বলেছে, পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ, প্রতিটি ছাত্রী হলে ভর্তুকিতে স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন, হলে নারী মেডিকেল অফিসার ও ‘সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর’ নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ, মেডিকেল সেন্টারে নারী চিকিৎসক ও নার্সের ব্যবস্থা এবং মেয়েদের হলে ওষুধের দোকান, সুপারশপ, জিমনেসিয়াম ও খেলার জায়গা ও মসজিদে নারীদের নামাজের স্থান নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়াও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়ে ছাত্রী হলগুলোতে প্রবেশের সময়সীমা বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে শাটল ট্রেনের বগি ও ট্রিপ বৃদ্ধি, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বগি সংযোজন, বিশেষ বাস সার্ভিস ও ই-কার চালুর পাশাপাশি শাটল ট্রেন, বাস ও ই-কার ট্র্যাকিংয়ের জন্য একটি মুঠোফোন অ্যাপ চালু, ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য শাটল বাস বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে মেডিকেল সেন্টারকে ১০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তর, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ব্লাড ব্যাংক স্থাপন, স্বাস্থ্য বীমা চালু এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ছাত্রদল।
‘জিরো প্লাস্টিক’ ক্যাম্পাস করার উদ্যোগ বাস্তবায়নের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া কার্যক্রমের সমৃদ্ধিতে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থান এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আদর্শ ধারণ করে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছে সংগঠনটির ইশতেহারে।
বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস চর্চা এবং একটি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টিও রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভূক্তিমূলক শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহিত করার কথা বলা হয়েছে।
আন্ত:বিভাগ ও হল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, আধুনিক সুইমিংপুল ও কেন্দ্রীয় জিমনেসিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও রয়েছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আট দফা ইশতেহারে।
ইশতেহারে ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য অন-ক্যাম্পাস ঘণ্টাভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা, শিক্ষা ঋণ চালুসহ বিভিন্ন পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়।
ছাত্রদলের প্যানেলের এজিএস পদপ্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জিএস পদপ্রার্থী শাফায়াত হোসেন।
ইশতেহার ঘোষণার সময় প্যানেলের বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান উপস্থিত ছিলেন।