Image description

জামায়াতের ঘাঁটি খ্যাত সাতক্ষীরার চারটি আসনই এবার ফিরে পেতে চায় দলটি। কিন্তু বিগত দেড় দশকের জুলুম-নির্যাতনের আমলে জামায়াতের অন্যতম শরিক দল বিএনপিও সব আসনে জয়ের আশায় চালাচ্ছে জোর তৎপরতা। জামায়াতে একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপিতে জেলার চারটি আসনে রয়েছেন অন্তত ডজনখানেকেরও বেশি সম্ভাব্য প্রার্থী। তাঁরা দলীয় কর্মসূচি এবং সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে এসে প্রার্থী চূড়ান্ত করার পরই তাঁদের মূল প্রচারণা শুরু হবে বলে দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে। এ দুটি দল ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের খুব একটা চোখে পড়ার মতো কর্মসূচি বা উপস্থিতি নেই। আর গণ-অভ্যুত্থানের পর হারিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের পরিচিত নেতারা। 

নির্বাচনী মাঠে থাকা বিএনপি-জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ও বাণী সংকলিত ব্যানার-ফেস্টুন, দেয়াললিখন যেমন চোখে পড়ছে তেমনি লিফলেট বিতরণের মাধ্যমেও এলাকায় নিজ নিজ অবস্থান জানান দিচ্ছেন কেউ কেউ।

রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণাও। আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চারটি আসনেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের মধ্যেই হচ্ছে। যদিও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি খুলনার এক অনুষ্ঠানে আভাস দিয়েছেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলেও ইসলামী জোটের শরিকদের ১০০ আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু স্থানীয় জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিত্রদের ছাড়লেও তার মধ্যে সাতক্ষীরার চারটির মধ্যে একটিও না থাকারই সম্ভাবনা বেশি।
 
সব মিলিয়ে বিগত দিনের প্রধান দুই শরিক দল তথা জামায়াতের সঙ্গে এ জেলার চারটি আসনে বিএনপি প্রার্থীদের ভোটের লড়াই হতে পারে। জেলার সাতটি উপজেলা, ৭৭টি ইউনিয়ন ও তিনটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চারটি সংসদীয় আসনে ভোটারসংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।

জামায়াতের দুর্গে বিএনপির চোখসাতক্ষীরা-১ : তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে ভোটার চার লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে পালাবদল হয়েছে এ আসনে। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাংবাদিক সাঈদুর রহমান, কলারোয়ার সাবেক পৌর মেয়র আক্তারুল ইসলাম এবং সাংবাদিক ও তরুণ নেতা আরিফুজ্জামান মামুন।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ এই আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ দীদার বখত।

সাতক্ষীরা-২ : সদর ও দেবহাটা নিয়ে গঠিত আসনটি রাজনৈতিকভাবে ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ। ভোটার সংখ্যা চার লাখের বেশি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি এই আসনে পালাক্রমে জয় পেয়েছে অতীতে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতী, সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম এবং আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ। আর জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন ও সাবেক এমপি আশরাফুজ্জামান আশু।

সাতক্ষীরা-৩ : আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলার আংশিক নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৪০ হাজারের বেশি। জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা রয়েছে হাফেজ মুহাদ্দিস রবিউল বাশারের। বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ড্যাব নেতা ডা. শহিদুল আলম গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জোট প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, ঢাকা বিশ্ববিদত্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা মির্জা ইয়াছিন আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুসও মনোনয়নপ্রত্যাশী। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী মো. আলিফ হোসেন।

সাতক্ষীরা-৪ : শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে মোট ভোটার প্রায় তিন লাখ। এখানে জামায়াতের প্রার্থী দুইবারের সাবেক এমপি, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী নজরুল ইসলাম।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী আলাউদ্দিন, জেলা আহ্বায়ক রহমাতুল্লাহ পলাশ, লন্ডনপ্রবাসী ড. মো. মনিরুজ্জামান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী। এ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এইচ এইচ এম গোলাম রেজাও নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী, যদিও তিনি এখনো দলীয় পরিচয় স্পষ্ট করেননি।

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবু জাহিদ ডাবলু বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুত। বিএনপি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।’ একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড় দলে একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে।’ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, ‘দলীয়ভাবে যে চারজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাঁরা সবাই নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নেতাকর্মীরা আগের চেয়ে অনেক মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।’