Image description
 

পূজা উদযাপনে ঝিনাইদহে চাচার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মদপানে মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী রানী সরকারের। গতকাল রোববার ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

 

তবে পুলিশ বলছে, মদপানে মারা গেলেও নন্দিনীর মৃত্যু নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শুরুতে পরিবার মদপানের কথা জানালেও এখন আর কেউ মুখ খুলছেন না। বান্ধবীদের সঙ্গে মদপান করেছেন- বলা হলেও নন্দিনীর সঙ্গে আসলে কারা ছিল, কে মদ সরবরাহ করেছে বা অন্যরা মদপান করলেও তারা কেন অসুস্থ হলেন না-এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর মিলছে না। নানাবাড়ির লোকজন এবং এলাকাবাসীও এ নিয়ে আর কোনো কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। 

ধারণা করা হচ্ছে, নন্দিনীর সঙ্গে যারা যারা ছিল, পরিচয় প্রকাশ পেলে তারাও ফেঁসে যেতে পারে। এজন্য তারা নন্দিনীর নানাবাড়ির লোকজনকে পুলিশকে তথ্য না দিতে চাপ দিচ্ছে।ফলে নন্দিনীর সঙ্গে যারা ছিলেন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে। একইসঙ্গে কী ধরনের মদপান করে তার মৃত্যু হয়েছে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তা জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

শৈলকুপা থানার ওসি মাছুম খান সোমবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। নন্দিনীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তবে তার নানাবাড়ির আত্মীয় স্বজন নতুন করে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এলাকাবাসীও এ নিয়ে মুখ খুলছে না। তবে যারা মদপানের সময় নন্দিনীর সঙ্গ যারা ছিল তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা করছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।

 

তিনি আরও বলেন, নন্দিনীর সঙ্গে অন্যরা অসুস্থ না হওয়ায় তার মৃত্যু নিয়ে অনেকটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে কোন ধরনের মদপানে তার মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে। 

এদিকে নন্দিনীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের গিলন্ডে যান সাংবাদিকরা। কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মেয়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি নন্দিনীর বাবা অনিল সরকার। 

এছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইলে কল হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

গেল জানুয়ারিতে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার মেধাতালিকায় ১৩৩তম স্থান অর্জন করেছিলেন নন্দিনী রানী সরকার (১৮)। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) ভর্তির সুযোগ পান তিনি। ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা শেষ করে দরিদ্র পরিবারের হাল ধরবেন। 

বাবা অনিল চন্দ্র সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পাওয়ার পর নন্দিনীর পরিবারে বয়ে যায় খুশির হাওয়া। তবে সেই আনন্দের সঙ্গে ছিল দুশ্চিন্তাও। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানো অনিল কীভাবে মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাবেন? সে সময় সংবাদপত্রে নন্দিনীর সাফল্যের কথা প্রকাশ হলে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। তবে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নযাত্রার শুরুতেই থেমে গেলেন মেধাবী নন্দিনী।