
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সড়কে বড় ঝুঁকির বাহন মোটরবাইক (মোটরসাইকেল)। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, গত দেড় দশকে দেশে সরকারিভাবে নিবন্ধনের হিসাব আমলে নিলে এই বাহন বেড়েছে ছয় গুণ। নিবন্ধনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই বাহনে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বাইক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৮৩৯ জন নিহত হয়েছেন।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতি মাসে গড়ে নিহত হয়েছেন ২০৪ জন। দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটাদাগে সাত কারণে বাইক দুর্ঘটনা বাড়ছে। এর মধ্যে আছে অতিরিক্ত গতি ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে চালানো, সুরক্ষার ঘাটতি, বাহনটির রাস্তায় ছোট ও অদৃশ্য থাকা, চালকের মনোযোগ মোবাইল ফোন বা অন্যদিকে থাকা, হেলমেট না পরা, খারাপ আবহাওয়া ও রাস্তার দুরবস্থা, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সের অভাব।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৮৬৪ জন বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৫.৬৭ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হেলমেটের গুণগত মান ঠিক থাকলে এসব দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং আহত হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমবে।
বিআরটিএ বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত ১৩ মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৫৯৫ জন নিহত হন। নিহতদের অন্তত এক হাজার ৭৯৮ জন বাইক আরোহী ছিলেন (প্রায় ৩৩%)। সরকারি ও বেসরকারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বড় অংশই বয়সে তরুণ, আছে শিশুও।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, বাইক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৮০ শতাংশ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মোটরবাইকের বড় একটি অংশ চলে গেছে কিশোরদের হাতে। তারা বেশির ভাগ সময় নিয়মনীতি না মেনে হেলমেট ছাড়া তিন থেকে চারজন উঠে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাইক দুর্ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে উন্নত দেশগুলোর মতো বিকল্প সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং ছোট ছোট যানবাহন চলাচলকে নিরুৎসাহ করতে হবে।
’ অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ছোট বা বড় সড়কে অনেক চালক বাইক চালান রেসিং মুডে, ট্রাফিক আইন মানেন না, ওভারটেকিং বা হঠাৎ লেন পরিবর্তন করেন, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, সব জায়গায় বিজ্ঞানভিত্তিক কাজ করতে হবে তাহলে বাইক দুর্ঘটনাও কমে যাবে। তরুণদের উত্তেজনা বেশি থাকে। এসব ক্ষেত্রে পুলিশও অসহায় থাকে, তারা চিপাচাপা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেল আকারে ছোট হওয়ায় অন্য বড় গাড়ির চালকরা অনেক সময় তাদের ঠিকমতো দেখতে পান না। বিশেষ করে মোড়ে ও ওভারটেক করার সময়।