Image description
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের বিরুদ্ধে একটি দলের ভূমিকায় থাকার অভিযোগ জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ আজ না হলে কাল * প্রশাসনে দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না : রিজভী

পরবর্তী জনপ্রশাসন সচিব কে হচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রশাসন পাড়ায় আগ্রহের যেন কমতি নেই। অপরদিকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জনপ্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এ পদটির প্রতি নির্বাচনমুখী সব রাজনৈতিক দল তীক্ষè নজর রাখছে। এমনকি কোনো কোনো দল তাদের পছন্দের আমলাকে এ পদে বসাতে পর্দার আড়ালে চেষ্টা-তদবির ও ত্রিমুখী লড়াই চালাচ্ছে। গত ১৪ মাসে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন এবং পদোন্নতিতে নজর না রাখলেও চলতি মাস থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেখভাল করার দায়িত্বে মাঠে নামছে বিএনপি। জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগ পেতে কয়েকজন আমলাও সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের কাছে নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার ফিরিস্তি তুলে ধরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই শক্ত হাতে প্রশাসন পরিচালনায় ব্যর্থ হলেও, এবার জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ, যোগ্য ও পেশাদার আমলাকে নিয়োগ দিতে হবে তাদের।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার সার-সংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সার-সংক্ষেপে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন দেয়া হতে পারে। সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে সদস্য হিসাবে বদলি করা হয়। এরপর থেকে প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদটি শূন্য রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী নির্বাচনে ডিসিসহ মাঠ প্রশাসনে কারা দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি এখন মুখ্য আলোচ্য বিষয়। সচিবদের মধ্যে যিনি গ্রহণযোগ্য, সৎ, যোগ্য এবং প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ কর্মকর্তা হবেন তাকেই জনপ্রশাসনের সচিব পদে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। কারণ, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। গত ১৪ মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ নিয়ে নানা বির্তক থাকলেও, সেটি থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবার নতুন পথে হাঁটছে। এ জন্য জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। রাজনৈতিক ভাবে এই পদ নেয়ার জন্য জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা, জামায়াত এবং এনসিপির নেতারা ও কিছু উপদেষ্টা জামায়াতের পক্ষে তদবীর শুরু করেছেন। গত ১৪ মাসে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তাদের নাম থাকলে তাদের পদায়ন বা বদলি করা হয়নি। এর মধ্যে সাবেক সচিব সামসুল আলমকে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর করা সার-সংক্ষেপ আদেশ জারি করা হয়নি। তার অভিযোগ, জামায়াতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সাবেক জনপ্রশাসন সচিব এবং অন্যদের ক্ষেত্রে কিছু উপদেষ্টা তাকে সচিব পদে যোগদান করতে দেননি। তিনি আরো জানান, প্রশাসনে সচিব পদে যাদের পদায়ন করা হয়েছে আসলে, বিএনপির সাথে তাদের কোনো সর্ম্পক নেই। বরং তারা সচিব পদে নিয়োগ পেয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে বলে বিএনপির নেতাদের অভিযোগ। তার মতে ভোটের আগে প্রশাসন নিয়ে বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে হবে এবং প্রশাসন সাজাতে হবে।

গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, প্রশাসনের এই পুরো নেটওয়ার্কের মূল নেতা হলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। তাঁর নিজের নেটওয়ার্ক বজায় রাখা এবং জামায়াতের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনপ্রশাসন সচিব পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. শেখ আব্দুর রশীদ অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এখন যারা সচিব পদে আছেন এদের মধ্য থেকেই নিজের পছন্দমতো কোনো কর্মকর্তাকে সচিব করতে। এখন সচিব পদে যারা আছেন এদের প্রায় সকলেই জামায়াতের অনুসারী। এরমধ্যে আগে থেকে জামায়াতের অনুসারী যারা ছিলেন তারা তো আছেনই। আওয়ামী লীগের যারা সচিব পদে আগে ছিলেন এবং যারা নতুন সচিব হয়েছেন, প্রশাসনের অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও যারা আছেন এদেরও তিনি জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অঘোষিত বাইয়াত পড়িয়েছেন জামায়াতে যোগদানের। অন্যদিকে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বায়তুল মালও সংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য দিতে রাজ হননি।

এদিকে দুর্গাপূজার টানা চারদিনের ছুটি শেষে আজ রোরবার থেকে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি অফিস আদালত খুলছে। এবার যদি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যন্য মন্ত্রণালয়ে ধর্মীয় একটি রাজনৈতিক দলের কথায় সচিব পদে নিয়োগ দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে বিএনপি কঠোর অবস্থানে যাবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এ্যাব) নবগঠিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ তুলে বলেছেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে একটি ধর্মভিত্তিক দলের অনুগতদের বসানো হচ্ছে। দল অনুগত প্রশাসন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য জনগণ প্রস্তুত। তারা পূর্বের মতো ডামি নির্বাচন চায় না। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন ইস্যু তৈরি করে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। ভ্রান্ত কথা বলে মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। গত ১৫ বছর কারা আপোষহীন লড়াই করেছে তা সাধারণ মানুষ জানে। বর্তমান সরকারের ১৪ মাসে প্রশাসন দখলের জন্য তারা যেটা করছে দেশের মানুষ তা জেনে গেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন সচিব পদে নিয়োগ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৫-৬ জন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। যাদের মধ্যে বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত ২-৩ জন সিনিয়র সচিবও রয়েছেন। এছাড়া বাকিরা নিয়মিত ব্যাচের। জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগের বিষয়টি জটিল সমীকরণে আটকা পড়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো নামই চূড়ান্ত না হলেও, আজ রোববার চূড়ান্ত হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দের একজন সচিবকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসনে বদলি করে আনতে চায়। আবার সেখানে নিতে চায় তাদের পছন্দের আরেকজন সচিবকে। তিনিও উন্নয়নসংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তাহলে নির্বাচনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয় থাকবে তাদের কব্জায়। তবে এ উদ্যোগে পুরোপুরি ভেটো দিয়েছে প্রভাবশালী আরকেটি রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, দলবাজ হিসাবে চিহ্নিত কোনো কর্মকর্তাকে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখতে চান না। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একজন শতভাগ পেশাদার, সাহসী, সৎ ও দক্ষ সচিব নিয়োগ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত সিনিয়র আমলাদের মধ্যে ভূতাপেক্ষভাবে সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ১৯৮৪ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা, যাকে সবাই ভালো নজরে দেখেন, তিনি জনপ্রশাসন সচিব পদে কিছুটা এগিয়ে আছেন। এ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে সচিবালয়ে কর্মচারী আন্দোলন সামাল দেওয়াসহ আওয়ামী লীগ আমলে পদোন্নতি বঞ্চিতদের পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এছাড়া নিয়মিত ব্যাচ থেকে নিয়োগ দেওয়া হলেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে। পেশাদার আমলা ছাড়া দলীয়ভাবে চিহ্নিত কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। অপরদিকে, বর্তমানে চুক্তিতে নিয়োজিত সচিবদের মধ্যে যারা নিজ মন্ত্রণালয়ে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি, তাদের ভাগ্যেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জুটবে না। ফলে প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদলের আভাস মিলছে। শীর্ষ পদ থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত বদলির প্রস্তুতি চলছে।

গত ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য পদে বদলির পর থেকেই আরো শীর্ষপদসহ মাঠ প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযানের আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের বেশি সময়ে অনিয়ম, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে কিছু সচিব ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। উচ্চ পর্যায়ে বিশেষ সখ্যতার কারণে খুবই প্রভাবশালী হওয়ায় তারা এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। জনপ্রশাসন সচিবকে গুরুত্বহীন বিভাগের বদলির মাধ্যমে বিশেষ বার্তা দেওয়ার মাধ্যমে সরকার প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালাতে চাইছে। এরই অংশ হিসেবে অভিযোগ ওঠা বিতর্কিত কিছু সচিব ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে গোটা সচিবালয় জুড়ে গুঞ্জন তীব্র হয়েছে। তাই সচিব ও ডিসিদের নিয়োগ-বদলির বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা সুদক্ষ, অভিজ্ঞ ও সাহসী কর্মকর্তা আছেন তাদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিত। আর দীর্ঘ সময় পরিবর্তন ছাড়া যারা মাঠ প্রশাসনে স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম করেছেন, তাদের দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন সচিব পদ শুন্য থাকায় অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদোন্নতি প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নতুন সচিব যোগ না দেওয়া পর্যন্ত পরবর্তী সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)’র বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। যে কারণে পদোন্নতি প্রত্যাশীদের আরো অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে চলতি সপ্তাহে নতুন জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন সচিবের শুন্য পদে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশ তাদের ঘরানার অফিসার বসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে তারা একের পর এক প্রার্থী পরিবর্তন এবং কৌশল পাল্টাচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে, জনপ্রশাসন সচিবের পদ দখল করতে জামায়াতের বাজেট হাজার কোটি টাকা। যাকে যে পরিমাণ দিয়ে কেনা যাবে, তারা তাই করবে। তারা মনে করে, জনপ্রশাসন সচিব পছন্দ মতে নিয়োগ করলেই নির্বাচন কব্জায় এসে যাবে। এই পদের জন্য জামায়াতের প্রথম পছন্দ গণপূর্ত সচিব পদে কর্মরত ১১ তম বিসিএসের নজরুল ইসলাম। কিন্ত একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টাকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, নজরুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ছাত্রশিবিরের ক্যাডার হিসাবে ওই বছরের ১৫ আগস্টের সহিংসতার সময় ছাত্রদলের জয়েন্ট সেক্রেটারি কবিরকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। সাভার থানায় ওই হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি ছিলেন নজরুল ইসলাম। যদিও এবছরের শুরুতে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসাবে এই নজরুলকেই সমর্থন দিয়েছিলেন বিএনপিপন্থীরা, তবুও জনপ্রশাসন সচিব হিসাবে নজরুলকে নিয়ে প্রবল আপত্তি বিএনপির।

জামায়াতের ২য় বিকল্প স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব পদে কর্মরত ১৩ তম বিসিএসের রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। তিনিও ছাত্রশিবির প্রোডাক্ট। তিনি শেখ হাসিনার আমলে আইসিটি খাতের সবচেয়ে বড় প্রজেক্টের (শেখ রাসেল প্রজেক্টের) পিডি ছিলেন সাড়ে তিন বছর। পলকের হাজার কোটি লুটের ক্যাশিয়ার হিসাবে ব্যাচে পরিচিত জাহেদী। তিনি নিজেও শত কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে অনেকের ধারণা। এর আগে জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমান মৌলভীবাজারের ডিসি থাকাকালে জাহেদী এনডিসি ছিলেন, মোখলেসের দুর্নীতির ক্যাশিয়ার ও নারী কেলেঙ্কারির জোগানদাতা হিসাবে অনেকেই জানেন তাকে। ফলে জাহেদী মানে মোখলেস পড়তে হবে। জামায়াতের ৩য় ক্যান্ডিডেট হলো ১৫ তম ব্যাচের ওবায়েদ, বর্তমান শিল্প সচিব। একসময় ছাত্রদল করলেও এখন জামায়াতে বায়াত নিয়েছেন। এর পাশাপাশি আরো নতুন পছন্দের তালিকায় এসেছেন সাবেক জামায়াত আমীর ও শিল্পমন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাবেক এপিএস মো. কামালউদ্দিন। যিনি বর্তমান আইএমইডি সচিব। ছাত্রজীবনে ছিলেন কট্টর শিবির। জানা গেছে, গত সপ্তাহে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে নজরুল, জাহেদী, কামাল, সানোয়ার, কবিরুলসহ ১৫ থেকে ২০ জন জামায়াত ঘরানার অফিসার একসাথে আলোচনায় বসেছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জনপ্রশাসন সচিবের পদ যেকোনো মূল্যে নিতে হবে। সর্বোচ্চ এফর্ট দিতে হবে। এবারে নতুন একটি টোপ তৈরি করা হয়েছে, চিটাগাং বাড়ি আর জামায়াতপন্থী হিসেবে নতুন নাম সামনে আনা হয়েছে ১৯৮৪ ব্যাচের মোহাম্মদ কেফায়েত উল্লাহর। তবে জনপ্রশাসন সচিব পদ নিয়ে সংকট চলতি সপ্তাহেই নিস্পত্তি হতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শুরু থেকেই শক্ত হাতে প্রশাসন পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে প্রশাসনের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এত ব্যর্থতা সত্ত্বেও জনপ্রশাসন সচিব নিয়োগ অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ, যোগ্য ও পেশাদার আমলাকে নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে আগের মতো বির্তক হবে।

গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাঠ প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযানের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু নানা জটিলতা, স্বার্থের টানাপোড়েন এবং কিছু সিনিয়র আমলার লবিংয়ে সেই প্রক্রিয়া ধীরগতি পায়। সম্প্রতি প্রভাবশালী ও বর্তমান সরকারের আস্থাভাজন জনপ্রশাসন সচিবকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কারণ কোন কর্মকর্তা সরকারের জন্য অপরিহার্য নয়, অদক্ষতা ও অনিয়ম ও দুর্নীতি করলে কাউকে অনুকম্পা দেখানো হবে না, এমন কঠোর বার্তা আমলাদের দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফিরেছেন। আগামী সপ্তাহে শীর্ষপদ থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক পদে পরিবর্তন আনা হতে পারে।

মাঠ প্রশাসনে অস্বস্তি : প্রশাসনের মাঠপর্যায়ে বর্তমানে কয়েকজন ডিসি রয়েছেন যারা প্রায় সাত মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সাধারণত পদোন্নতির পর দ্রুতই মাঠ থেকে তাঁদের প্রত্যাহার করা হয়। এবার ব্যতিক্রম ঘটেছে। তাঁরা এখনো বহাল তবিয়তে জেলায় ডিসির দায়িত্ব পালন করছেন। এই দীর্ঘস্থায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ আছে, দায়িত্বে থেকে তাঁরা প্রভাব খাটাচ্ছেন, এমনকি অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নিচ্ছেন। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। বড় বড় জেলায় দায়িত্বে থাকা কিছু ডিসি ক্ষমতার জোরে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বিশেষ তদবিরে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিসি পদে থাকতে চাইছেন। অবার বদলির শঙ্কা থেকে তাঁরা ‘যতটুকু পারা যায়’ এই নীতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বাড়াচ্ছেন। এসব কারণে ডিসি নিয়োগ প্রত্যাশী উপসচিবদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রশাসনে আলোচনা রয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের বদলি-নিয়োগে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এবার এমন কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন, যাঁরা মাঠ প্রশাসনে অভিজ্ঞ ও সাহসী হিসেবে পরিচিত। তাঁদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নিচ্ছে। অন্যদিকে, যারা যুগ্ম সচিব পদোন্নতি পেয়ে এখনো ডিসি হিসেবে রয়েছেন, তাঁদের দ্রুত প্রত্যাহারের সম্ভাবনা আছে। তবে অনেকেই ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকতে চান এমন আশায় ক্ষমতার কেন্দ্রের সঙ্গে জোর লবিং করছেন। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে নির্বাচনের আগে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য নিয়োগ-বদলিতে সকল ধরনের প্রভাবমুক্ত প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে চাইছে সরকারের জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি। দেশের জনগণের আস্থা পেতে প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় শুধু আমলা নয়, পুরো সরকারের ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে কমিটির সমস্যরা মনে করছেন। প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান না এনে কর্মকর্তাদের শুধু বদলি করলেই সমাধান হবে না। নিয়োগ ও বদলির নীতি নির্দিষ্ট করতে হবে। একজন ডিসি কত দিন মাঠ প্রশাসনে থাকবেন বা পদোন্নতির পর কত দিনের মধ্যে বদলি হবেন এসব স্পষ্ট নিয়ম থাকতে হবে। এক্ষেত্রে প্রভাবমুক্ত, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে ডিসি নিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। গত এক বছরে প্রশাসনে বদলি ও নিয়োগ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ছিল না।

ডিসি নিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের বিতর্ক : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ প্রশাসন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে একাধিক চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ হয়। পাশাপাশি, আগের সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া কিছু ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারকে প্রত্যাহার করে দলনিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও স্বচ্ছাতার ঘাটতিতে কিছু বিতর্কিত কর্মকর্তা ডিসি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। বিষয়টি জানাজানি হলে ডিসি নিয়োগ পাওয়াদের মধ্য থেকে কয়েকজনের নিয়োগ বাতিল করতে হয়। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনে নিয়োগে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন হয়েছে। যা, টক অব দ্য সচিবালয়ে পরিণত হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা বিব্রত হন। এমন কি এ ঘটনা দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়। এর পরই প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার কথা থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে রহস্যজনক কারণে সেটি কার্যকর হয়নি। যে কারণে পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ থেকে গেছে।