
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে তৎপর জামায়াতের নারী কর্মীরা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত জামায়াতের নারী শাখার নেতাকর্মীরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। নানা কৌশলে দলীয় ও ভোটের প্রচারণা করছেন তারা। দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে পরকালের মুক্তি মিলবে এমনটাও বলা হচ্ছে দলীয় বৈঠক বা প্রচারণা থেকে। কর্মসূচির বাইরে কোনো কোনো এলাকায় সরাসরি ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন নারী কর্মীরা। তারা দলীয় প্রচারপত্র হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। নিজেরা পর্দা মেনে প্রচারণা চালালেও নারীদের অভয় দিচ্ছেন ভবিষ্যতে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে স্বাধীনভাবেই চলা যাবে। ওদিকে ভোটের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয় জড়িতে প্রচারণা চালানোয় কেউ কেউ বিভ্রান্তও হচ্ছেন।
মানবজমিন-এর প্রতিনিধিরা দেশের বেশ কয়েকটি জেলার ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনী এলাকা সরজমিন ঘুরে জামায়াতের নারী শাখার এই তৎপরতার তথ্য পেয়েছেন। এলাকা ঘুরে দেখা যায় জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত জামায়াতের মহিলা শাখার কমিটি রয়েছে। নিজ নিজ ইউনিটের কর্মীরা দলবেঁধে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন দলীয় কর্মসূচিতেও। নির্বাচনী প্রচারণায় নানা কৌশল নেয়া হচ্ছে।
মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় নারী রুকনদের নেতৃত্বে গ্রুপ ভিত্তিক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, পূর্ব পরিচিত একজনের মাধ্যমে নারী নেত্রীরা দাওয়াত দিতে এসেছিলেন। তারা দলীয় কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন, একইসঙ্গে দলীয় প্রতীকে ভোট দেয়ার কথা বলেন। এখনই ভোটের প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না এমনটা জানালে ভোটের আগে আবার আসবেন বলে চলে যান তারা।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় জামায়াতের মহিলা শাখার কমিটি রয়েছে। উপজেলার অধীনে ৯ ইউনিয়নেও মহিলা শাখার কমিটি আছে। এ ছাড়া কালিয়াকৈর পৌর জামায়াতের মহিলা শাখার কমিটি রয়েছে। পৌরসভার অধীনে ৯টি ওয়ার্ডেও কমিটি রয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, মহিলা শাখার কার্যক্রম অডিটোরিয়াম ভিত্তিক পর্দা মেনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অনুমতি সাপেক্ষে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে পারেন ও মিডিয়া কাভারেজ করতে পারেন। সবগুলো শাখার দলীয় কার্যক্রম চলমান আছে।
ময়মনসিংহ-১০ আসনে জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। এই আসনে জামায়াতের পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি মহিলা শাখার সদস্যরাও বিভিন্ন ইউনিয়নে সমাবেশ করছেন। প্রতিটি গ্রামে নির্ধারিত একটি বাড়িতে গ্রামের মহিলাদের জড়ো করে ধর্মীয় তালিমের আয়োজন করা হয়। সেখানে নির্বাচন এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও নারী নেত্রীরা কথা বলেন।
গফরগাঁও পাগলা থানা শাখার মহিলা বিভাগের কর্মপরিষদ সদস্য হাজেরা খাতুনের নেতৃত্বে দলটির নারী কর্মীরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাধীন পাইথল ইউনিয়ন শাখার নারী বিভাগের সভানেত্রী আফরোজা খাতুনের উদ্যোগে প্রতিটি ইউনিয়নে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গফরগাঁও উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নে আগে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি ছিল। স্থানীয় জামায়াতের নারী সদস্যরা এই ইউনিয়নে নারী ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। ধর্মীয় আলোচনার ফাঁকে দাঁড়িপাল্লায় ভোট চাইছেন। উপজেলা জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, এই আসনের দু’টি থানার প্রতিটি ইউনিয়নে জামায়াতের নারী শাখার সক্রিয় কমিটি রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে দলীয় কর্মসূচির প্রচার ও ভোট চাইছেন নারী কর্মীরা। এমনকি এলাকার বাইরে থাকা নারী ভোটারদের সঙ্গেও তারা টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মহিলা জামায়াত কর্মী নাদিয়া শারমিন বলেন, আমরা ধর্ম পালনের কথা বলি। নামাজ আদায়ের জন্য আহ্বান জানাই। ইসলামের পক্ষে ভোটদানের জন্য জামায়াতের কথা বলি। তিনি বলেন, জামায়াতে ভোট দিলে সেই ভোট ইসলামের পক্ষে যাবে। নারীরা স্বাধীনভাবে চলতে পারবে।
সার্বিক বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা মুহাম্মদ নুরুল হক পাটোয়ারী বলেন, আমরা ঘরে ঘরে নারীদের এই কার্যক্রমকে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা নিজেদের মতো করে এলাকা ভাগ করে যাচ্ছেন। তারা ভোট চাইছেন নারীদের কাছে। ইসলামের কথা বলছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এটা আরও জোরদার হবে।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় জামায়াতের ২ হাজারের অধিক নারী কর্মী সক্রিয় রয়েছেন বলে স্থানীয় জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন। এ ছাড়া মুরাদনগর উপজেলায় জামায়াতের নারী সদস্য রয়েছেন প্রায় ১,২০০ জন। এই নারী কর্মীরা পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তারা ঘরে ঘরে যাচ্ছেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে।
কুমিল্লা-৩ আসনের জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ইউসুফ হাকিম সোহেল বলেন, আমাদের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ যেহেতু মহিলা। তাই মহিলাদের দাওয়াতের জন্য আমাদের মহিলা বিভাগ ও ছাত্রী সংস্থা কাজ করছে।
জামায়াতের মহিলা শাখার বিদেশ বিভাগীয় সেক্রেটারি প্রফেসর খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, সারা দেশে আমাদের মহিলা শাখার কার্যক্রম রয়েছে। বিভিন্ন জোনভিত্তিক দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে কয়েক লাখ সদস্য দাওয়াতি কাজ এবং নির্বাচনী তৎপরতায় সম্পৃক্ত রয়েছে।