
বিএনপিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। আসনভিত্তিক প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। একক প্রার্থী নির্ধারণে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে একক প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে প্রত্যেক আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। সম্ভাব্য প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ, জেলা, উপজেলার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে জরিপে এগিয়ে থাকা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে আরও বিস্তর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। প্রায় ৭০ শতাংশ আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থীর তালিকা দলটির হাইকমান্ডের কাছে। এদিকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্রদের নিয়েই নির্বাচন করতে চায় বিএনপি। এজন্য আসন ছাড় দেবে দলটি। সব মিলে শতাধিক আসন চায় মিত্ররা। এ অবস্থায় মিত্র দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি দল ও জোট তালিকা দিয়েছে। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, সেভাবেই আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপি পুরোপুরি প্রস্তুত। একক প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কবে নাগাদ সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে, সেটা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে শিগ্গিরই সিদ্ধান্ত নেবেন। যদিও দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, খুব শিগ্গিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। তবে সেটা চূড়ান্ত নয়। তফশিল ঘোষণার পর পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে আমরা চূড়ান্ত মনোনয়ন দেব। তিনি এও বলেন, প্রতিটি আসনে আমাদের একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছেন। অনেক আসনে আমাদের পাঁচজন, সাতজন এবং দশজন করে যোগ্য প্রার্থী আছেন। সুতরাং একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়টা আমাদের দেখতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। চলছে নির্বাচনকেন্দ্রেকি মাঠ সাজানোর কাজ। তফশিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরের মধ্যভাগেই তাদের মাঠে নামার সংকেত দেওয়া হবে। আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এ পর্যন্ত অন্তত ৫টি জরিপ চালিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আন্তর্জাতিকভাবে, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, দলের সাংগঠনিক টিম এবং মিডিয়ার মাধ্যমে এসব জরিপ করা হয়। এছাড়াও বিএনপির গুলশান অফিসের ৩ জন এবং একটি দৈনিকের ২ প্রতিনিধি নিয়ে সারা দেশে জরিপ চালানো হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বেঁধে দেওয়া ‘মানদণ্ডে’ (আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজধারী) এসব তালিকায় প্রতিটি আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ওঠে আসে। তাদের নিয়েই সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারা বৈঠক করেন। নির্বাচনি প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও জোরালো করাসহ দলের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, নির্বাচনি মাঠে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান তারেক রহমান। একই সঙ্গে কঠোর বার্তাও দেন তিনি। জানা যায়, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করলে কিংবা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। এমন সতর্কবার্তা ইতোমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের প্রথমে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত জানানো হবে। মাঠপর্যায়ে তারা প্রচার-প্রচারণা চালাবেন। আসনগুলোয় অন্য যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, তারাও সবুজ সংকেত পাওয়া প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন। এ সময়ে তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে তফশিল ঘোষণার পর দলের পার্লামেন্টারি বোর্ডে মাধ্যমে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে।
শতাধিক আসন চাচ্ছে মিত্ররা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির কাছে শতাধিক আসন চাচ্ছে মিত্র রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ও জোট বিএনপির কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জামা দিয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি দল তালিকা দেবে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, তারা আগামী নির্বাচনে বিএনপির কাছে ১৫টির মতো আসন চাইবে। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী তার দলের পক্ষে ঢাকা-৬সহ ১৫টি আসন চাইবেন।
বিএনপির কাছে অর্ধশতাধিক আসন চাইবে গণতন্ত্র মঞ্চ। শনিবার এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ বৈঠক করেছেন মঞ্চের নেতারা। সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে ছয় সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আজ তাদের তালিকা প্রস্তুত করার কথা। এদিকে অন্তত ২০ আসন চেয়েছে ১২ দলীয় জোট। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট চেয়েছে ৯টি।
প্রাপ্ত তালিকার তথ্য বলছে, নড়াইল-২ থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, দলটির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা চাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-২ আসন, জাগপার একাংশের সভাপতি খন্দকার লুৎফর বগুড়া-১, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী চট্টগ্রাম-১, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের কমরেড ডা. সৈয়দ নূরুল ইসলাম মানিকগঞ্জ-১, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ব্যারিস্টার নাসিম খান ঢাকা-১৭, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এসএম শাহাদাত বাগেরহাট-১, ডেমোক্রেটিক লীগের মাহবুব আলম দিনাজপুর-২ এবং এনডিপির আব্দুল্লাহ আল হারুন ফেনী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। এছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকা রয়েছে বিএনপির হাতে। তবে মিত্রদের অনেকেই কৌশলের অংশ হিসাবে বিষয়টি সামনে আনতে চাচ্ছেন না। কয়েকটি দল তালিকা প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় নিতে চায়।
মিত্রদের কত আসন দেওয়া হবে-এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, আলাপ-আলোচনা চলছে।