
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর প্রত্যন্ত জনপদ পারুলিয়া। যে গ্রামে রয়েছে ঘন সবুজ আর ফসলের ভান্ডার। শস্যের মাঠ, আঁকাবাঁকা খালবিল আর ফলের বাগানে ভরা এক সমৃদ্ধ জনপদ। কোমল সবুজে ঘেরা, পাখির কলকাকলীতে মুখর এই নির্মল জনপদে কিছুদিন আগেও সকাল থেকেই কিষান-কিষানিরা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন ক্ষেত-খামারের কাজে। স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা নির্ভর করত তিন ফসলি জমি, খালের মাছ আর মৌসুমি ফলের ওপর। কিন্তু এখন সেই প্রকৃতি যেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রাণচঞ্চল প্রকৃতির জায়গা নিয়েছে ধোঁয়া, দূষণ আর ভয়ের রাজত্ব। বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, অ্যাসিডের গন্ধ আর ভারী ধাতুর বর্জ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার পরিবেশ ও জনজীবন। গ্রামের শান্ত পরিবেশে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটিয়েছে পুরোনো বাতিল ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসার বার তৈরির কারখানা। সন্ধ্যা নামলেই বিষাক্ত ধোঁয়ায় ভারি হয় বাতাস, শ্বাসকষ্টে ভোগেন অ্যাজমা রোগীরা। রাত গভীর হলে মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গ্রামবাসী।
কাশিয়ানী উপজেলার পারুলিয়া এলাকার সোনাডাঙ্গা খালের পশ্চিম পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এমএস মেটাল নামের দানবাকৃতির ওই সিসা কারখানা। পুরোনো ব্যাটারি পোড়ানো হয় এ কারখানায়, সেখান থেকে তৈরি হয় সিসা। ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া ও অ্যাসিডের উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ জনজীবন। শ্বাসকষ্টে ভুগছেন পার্শ্ববর্তী জনপদের বাসিন্দারা। এ ছাড়া ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ফলে তিন ফসলি জমিসহ বিভিন্ন গাছের ফলও ঝরে পড়ছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
কিন্তু ভয়ে ভুক্তভোগীদের কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারেন না। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন হামলাসহ মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। নাম গোপন করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কারখানা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বারবার আবেদন জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগ দিয়েও কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় তারা এখন আর এ বিষয়ে কথা বলতে চান না।
সম্প্রতি সিসা কারখানা বন্ধের দাবিতে পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি ইউনিয়নের খাগড়াবাড়িয়া সোনাডাঙ্গায় শত শত বিঘা ফসলি জমি জবরদখলের মাধ্যমে বালু ভরাট করে সিসা তৈরির কারখানা করে পরিবেশ দূষণ এবং গরিবদের ভূমিহীন করা হয়েছে। কারখানার দূষিত ধোঁয়া ও পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং খালবিলের মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। আশপাশের খালবিলে গোসল করলে মানুষ ও গরু-মহিষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী মারাত্মক বিপদের সম্মুখীন।
সেই আবেদনপত্রের সূত্র ধরে সরেজমিন গিয়েও অভিযোগের সত্যতা মেলে। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পারুলিয়া এলাকায় সোনাডাঙ্গা সুইচ খালের পশ্চিম পাশে অবস্থান সিসা তৈরির কারখানাটির। সেখানে পুরোনো ও নষ্ট ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে দানবাকৃতির চিমনি দিয়ে। অনেক দূর থেকেও কারখানার চিমনি থেকে ঘন কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ের কুণ্ডলি বের হতে দেখা যায়। নদী আর খালে বেষ্টিত মনোরম সুন্দর গ্রামটিতে কালো ধোঁয়া ও অ্যাসিডের উৎকট গন্ধে অতিষ্ঠ জনজীবন।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করার সময় বিষাক্ত কালো ধোঁয়া চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে, নিঃশ্বাসে ভেসে আসে ঝাঁজালো গন্ধ। কারখানার আশপাশের বাড়ির টিনের তৈরি ঘরগুলোর ভেতরে কালো দাগ পড়ে গেছে। কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ফসলি জমি ও খাল বেয়ে সরাসরি বিলে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কারখানা ফসলি জমি থেকে শুরু করে শুধু নদী-খালের পানিই বিষাক্ত করছে না, বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসেও বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলাকার মানুষ অভিযোগ করছেন, প্রতিদিনই শিশুরা শ্বাসকষ্ট, ত্বকের রোগ ও মাথাব্যথায় ভুগছে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তবে প্রকাশ্যে এই কারখানার ক্ষতির বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নন ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মানুষেরা। কারণ, প্রতিবাদ করার ফলে উল্টো প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলাসহ মিথ্যা অভিযোগে করা বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এমনকি এলাকা ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়।
কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এমএস মেটাল নামে সিসা তৈরির কারখানাটি গড়ে তুলেছেন শরিফুল ইসলাম দুর্জয় নামে এক ব্যক্তি, প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীর নামে কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাটারি রিসাইক্লিং ফ্যাক্টরি হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্রও নিয়েছেন তিনি। ব্যাটারি উৎপাদনের অনুমোদন নিলেও সেখানে মূলত ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। সাধারণত সিসা তৈরি বা ব্যাটারি রিসাইক্লিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয় না। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিবেশের ছাড়পত্র ম্যানেজ করেন শরিফুল ইসলাম দুর্জয়।
প্রতিষ্ঠানটির তৈরি ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, তাদের কারখানাটি পরিবেশবান্ধব। তাদের দাবি, ব্যাটারি এবং ব্যাটারির যন্ত্রাংশ তৈরিতে ধোঁয়া ও বর্জ্য পরিশোধনে কয়েক স্তরে উন্নত পরিশোধন ব্যবস্থা রয়েছে। কারখানা থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তা অত্যাধুনিক মেশিনে বিশুদ্ধ করা হয়। কিন্তু আদতে তার কিছুই করা হয় না। অত্যাধুনিক এয়ার ট্রিট প্লান্ট এটিপি এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ইটিপি ব্যবস্থা থাকার কথা বলা হলেও তার অস্তিত্ব নেই।
গোপালগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমানের কাছে কারখানাটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাগজপত্রে কারখানাটির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। এ ধরনের কারখানার অনুমোদন নিতে হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের সদর দপ্তর থেকে। কীভাবে তিনি অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন, সেটা আমাদের জানা নেই। তবে অনুমোদনের ক্ষেত্রে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাটারি ও ব্যাটারির যন্ত্রাংশ তৈরির অনুমোদন নিয়ে কারখানা স্থাপন করা হলেও সেখানে পুরোনো ও নষ্ট ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কারখানার ভেতরে পুরোনো ব্যাটারি ভাঙা এবং ব্যাটারি পোড়ানো সিসা প্রস্তুতের কাজ করতে দেখা যায় কিছু শ্রমিককে। তবে সাংবাদিক পরিচয় জানার পরই বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জোর করে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।
দিনে সারাদিন ব্যাটারি ভাঙার কাজ চললেও সন্ধ্যার পর শুরু হয় ব্যাটারি পোড়ানো। রাতভর চলে এ ব্যাটারি পোড়ানোর কাজ। রাতে সরেজমিন দেখা যায়, কারখানার চিমনি দিয়ে বের হচ্ছে ব্যাটারি পোড়ানোর কালো ধোঁয়া, যা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সেখানে অবস্থান করে কালো বিষাক্ত ধোঁয়া ও অ্যাসিডের উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়। কোনো ধরনের নিরাপত্তাবলয় ছাড়াই পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে ক্ষতিকর সিসা তৈরির কাজ করেন সেখানকার শ্রমিকরা।
এলাকার এক ব্যক্তি বলেন, ‘এ কারখানার কারণে আমাদের বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চা শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে ভুগছে। এলাকার সবাই মিলে দুর্জয়কে বারবার নিষেধ করা হলেও সে আমাদের অনুরোধ না শুনে উল্টো মামলা-হামলার ভয়ভীতি দেখায়। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তাই আমাদের দাবি, যাতে এ অবৈধ সিসা কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ এ কারখানার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করেন না।।’
স্থানীয়দের দাবি, শরিফুল ইসলাম দুর্জয়ের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। যারা প্রতিবাদ করেন, তাদের ওপর নেমে আসে ভয়ভীতি, হামলা ও মিথ্যা মামলা। এতে সাধারণ মানুষ আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলের পরিচয় এবং প্রভাব খাটিয়ে শরিফুল ইসলাম দুর্জয় প্রায় ৫০ বিঘা জমি দখল করে কারখানাটি গড়ে তুলেছেন। কারখানার জমির জন্য ইচ্ছামতো দাম ধরে কিছু মানুষের টাকা দিয়ে দিলেও এখনো টাকা বুঝে পাননি অনেকে। যাকে দিয়ে কারখানাটিতে বালু ভরাট করা হয়েছে, সেই ঠিকাদারকেও টাকা বুঝিয়ে দেননি, বারবার টাকা চাওয়ায় বেশ কয়েকটি মামলাও ঠুকে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি সরকারি খাল ড্রেজার দিয়ে ভরাট করার অভিযোগও উঠেছে দুর্জয়ের বিরুদ্ধে। এতে বিএডিসির প্রকল্পের অধীনে থাকা কৃষিজমি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। একসময়ের উর্বর জমিতে ধান, সবজি বা অন্য কোনো ফসলই ঠিকমতো ফলছে না। এমন প্রভাবশালী দুর্জয়ের সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় আরও বেশকিছু তথ্য।
শুধু এ কারখানা নয়, ক্ষমতার প্রভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন দুর্জয়। এলাকাবাসী জানান, হঠাৎ করেই যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পান তিনি। ভিটেবাড়ি বলতে শুধু একটি ঘর ছিল যার, গত এক যুগে তিনিই হয়ে গেছেন প্রায় শতকোটি টাকার মালিক। কাশিয়ানীর কারখানা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে তার বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, ফ্যাক্টরি এবং বাগানবাড়ি। অথচ মাত্র ১০ বছর আগেও হকারি করে চলত তার সংসার।
দীর্ঘ চেষ্টার পর কয়েকজন ভুক্তভোগী কালবেলাকে জানান, তাদের অভিজ্ঞতার কথা। স্থানীয় প্রবীণ কৃষক নিজাম মোল্লা বলেন, ‘একসময় আমরা তিন ফসল তুলতাম এই জমি থেকে। এখন মাটি বিষাক্ত হয়ে গেছে। গাছের ফল পেকে যাওয়ার আগেই ঝরে পড়ে। মাছও পাওয়া যায় না খালে। আরেক বাসিন্দা আমেনা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কারখানার ধোঁয়ায় বাচ্চারা সারাক্ষণ কাশি দেয়। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়। অথচ কেউ আমাদের কথা শোনে না।’
প্রতিবাদ করায় একাধিক মামলার শিকার মেহেদী হাসান রাসেল কালবেলাকে বলেন, ‘এলাকার সাধারণ মানুষকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে তিন ফসলি জমিতে সিসা কারখানা গড়ে তুলেছেন দুর্জয়। আমি প্রথমে যখন প্রতিবাদ করি আমার ও আমার চাচাতো ভাইকে চাঁদাবাজি মামলা দেয়, সেই থেকে একে একে ছয়টি মামলা দিয়েছে, আমাকে জেল খাটিয়েছে, যে এর প্রতিবাদ করে তাকেই মামলা দেয়, কারখানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিবাদ মানেই হামলা, মামলা আর হুমকি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর আমরা একটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলাম; ভেবেছিলাম এই বুঝি এলাকার মানুষ এর থেকে মুক্তি পেল; কিন্তু ঘটল তার উল্টো। ৫ আগস্টের পর কোনো এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। আমার নামে আরও মামলা হলো, অথচ দিব্যি চলমান সিসা কারখানা।’
জোর করে জমি দখলের শিকার ভুক্তভোগী শ্রাবণী বেগম বলেন, ‘আমার শ্বশুরের জমি ছিল ধান চাষের জন্য। কিন্তু একদিন দেখি জমিতে বালু ভরাট করে কারখানার ভেতরে নিয়ে গেছে। ক্ষতিপূরণ চাইলে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়। ওদের বিপক্ষে কথা বলার ক্ষমতা আমার নেই। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে খেতে হয়।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (ইউপি সদস্য) জুয়েল মোল্লা বলেন, ‘নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শরিফুল ইসলাম দুর্জয় অন্যের কাছ থেকে খরচ নিয়ে পড়ালেখা করেছে, বাবা ঠিকমতো পড়ালেখার খরচ চালাতে পারেনি। হঠাৎ এলাকায় এসে কারখানা করেছে শুনেছি, ঢাকায় অনেক অর্থসম্পদ রয়েছে, সব সময় অস্ত্র নিয়ে ঘুরত, এলাকার নিরীহ মানুষদের আতঙ্ক দেওয়ার জন্য জনসম্মুখে ফাঁকা গুলিও ছুড়েছে, উনার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বলত—গুলি করে দেব।’
স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলেছেন, শুধু পরিবেশ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সিসা দূষণ থেকে রক্ষা করতে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একদিকে প্রকৃতির সবুজ শ্যামল ভান্ডার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে মানুষজন প্রতিদিন ভয় নিয়ে বাঁচতে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে এ অবৈধ সিসা কারখানা বন্ধ না করলে কাশিয়ানীর কৃষি, জলাশয়, জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্য ভয়াবহ সংকটে পড়বে।
অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে শরিফুল ইসলাম দুর্জয়ের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তার গ্রামের বাড়িতে এবং কারখানায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি বিদেশে অবস্থান করছেন। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে। কারখানার বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, কারখানার বিষয়ে আগে আমাদের জানা ছিল না। জেনে সঙ্গে সঙ্গে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তেরও নির্দেশ দেন তিনি। স্থানীয়রা ভয় না পেয়ে অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানা তিনি।
সম্প্রতি আইসিডিআরবি,র এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বজুড়ে সিসা দূষণে আক্রান্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানে চতুর্থ। যেখানে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে উচ্চমাত্রার সিসা নিয়ে জীবন ধারণ করছে। আইসিডিডিআর,বির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ডা. মো. মাহবুবুর রহমান গত ১০ বছরের সিসা-সম্পর্কিত গবেষণার ফল তুলে ধরে বলেন, সিসা দূষণের প্রধান উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে—সিসা ও ব্যাটারি-সম্পর্কিত শিল্পকারখানা। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, চিহ্নিত সিসানির্ভর শিল্প স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী শিশুদের রক্তে সিসার মাত্রা ছিল ৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে বসবাসকারী শিশুদের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
আইসিডিডিআরবি,র নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, সিসার বিষক্রিয়া নীরবে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কেড়ে নিচ্ছে। এটি তাদের মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ ব্যাহত করে ও দেহে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি করে। তাই আমাদের এখনই এ সিসা নিঃসরণকারী ক্ষতিকর উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিশু সুস্থ ও বুদ্ধিমান হয়ে বেড়ে উঠতে পারে।