Image description
আইনি জটিলতা কাটলেই শুরু হবে কার্যক্রম

সাভারের চামড়াশিল্প নগরী প্রায় এক দশক ধরে সম্ভাবনার গল্প শোনাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা এখনো অসম্পূর্ণ। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি চালু হয়নি। ট্যানারিগুলোর অনেকটিই আন্তর্জাতিক মান মেনে চলছে না।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) দীর্ঘ ব্যর্থতায় অবশেষে এ নগরীর দায়িত্ব যাচ্ছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) কাছে। ৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বৈঠকে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত ঘিরে চামড়াশিল্পে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর কার্যক্রম হস্তান্তরের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বেশ কয়েকবার সভা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

চামড়াশিল্প নগরীর এ যাত্রা দীর্ঘদিনের। এ শিল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ট্যানারি মালিকরা, সরকারও সেখানে ঢেলেছে ১ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বিসিকের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে প্রকল্পটি কখনো পূর্ণতা পায়নি। সিইটিপি এখনো অকার্যকর, ফলে আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেশনও মিলছে না।

এ ব্যাপারে বিসিকের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাভারের চামড়াশিল্প নগরী নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। বিডা, বেজাসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান এ কমিটিতে আছে। তারা ইতোমধ্যে সেখানে পরিদর্শনে গিয়েছে। ওই কমিটি থেকে সিইটিপিসহ চামড়াশিল্প নগরীর অন্যান্য কাজ বেপজাকে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সিইটিপি-ইটিপিসংক্রান্ত কাজ বেপজার হাতে দেওয়ার। তবে কিছু আইনি জটিলতা আছে। সেগুলো শেষ হলেই বেপজা কার্যক্রম শুরু করবে।’

বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এ ব্যাপারে বলেন, ‘সিইটিপি ঠিক না হলে আন্তর্জাতিক এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া যাবে না। বেপজা অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান, তাদের হাতে এ দায়িত্ব গেলে কাজ সম্পন্ন হওয়ার আশা আছে।’

২০৩০ সালের মধ্যে চামড়াশিল্পে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অথচ দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময়েও খাতটি ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিসীমা অতিক্রম করতে পারেনি। এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক মানের অভাব। দেশে নিবন্ধিত ২২০টি ট্যানারির মধ্যে মাত্র ৮টি এলডব্লিউজি সার্টিফায়েড। অথচ ইতালির প্রায় ১ হাজার, ভারতের ৩ শতাধিক, চীনের ২ শতাধিক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো এখনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো ও প্রযুক্তির ঘাটতিতে পিছিয়ে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্য মিলছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু দায়িত্ব হস্তান্তর নয়, সিইটিপি দ্রুত সমাপ্তি ও আধুনিকীকরণ, এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশনকে জাতীয় অগ্রাধিকার ঘোষণা, করছাড় বা সহজ ঋণের ব্যবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া জরুরি। নইলে সরকারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হবে না।

সাভারের চামড়াশিল্প নগরী নিয়ে ব্যবসায়ী, সরকার ও পরিবেশবিদদের আশা-আশঙ্কা একসঙ্গে জড়িয়ে আছে। বেপজার অভিজ্ঞতা হয়তো কিছুটা ভরসা জোগাচ্ছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা, সদিচ্ছা আর কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া এ খাতের অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়, এমন মতই দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।