Image description
♦ ৩৯ জেলার রেলপথেই রয়েছে নানামুখী সমস্যা ♦ তিন মাসেই প্রায় ৩০টি স্থানে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে

দেশে সম্প্রতি ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রেলপথ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন ব্যবস্থা হলেও লাইনচ্যুতির ফলে এ মাধ্যমটির প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেলপথ, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা এবং ফিশ প্লেট না থাকার কারণে এমন হচ্ছে বলে রেলসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া রেলের ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) মান ভালো না থাকা, কোচের (বগি) বেহাল কারণেও এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩ জেলায় রয়েছে রেলপথ। এর মধ্যে ৩৯ জেলার রেলপথেই রয়েছে নানামুখী সমস্যা। ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা শুধু জানমালের ক্ষতির কারণই নয়, ট্রেন পরিবহনব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। গত তিন মাসেই প্রায় ৩০টি স্থানে লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।

এ প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিগত সময়ে রেলে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এখন পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সংকট কেটে যাবে।’

জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর পাবনায় লাইনচ্যুত হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি। এদিন ভাঙ্গুড়া স্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গুড়া স্টেশনে পৌঁছলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে দুর্ঘটনাস্থলের আগে ও পরের দুই পাশের স্টেশনগুলোতে আটকে পড়া বেশ কয়েকটি ট্রেনের শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের পাওয়ার কারের একটি বগি লাইনচ্যুত হয় গত ৯ সেপ্টেম্বর। ভোর পৌনে ৪টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণে ভদ্রকালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনার পরে লাইনচ্যুত বগি ও পেছনের কয়েকটি বগি ফেলে রেখে মাত্র পাঁচটি বগি নিয়ে ট্রেনটি জয়পুরহাট স্টেশনে পৌঁছায়।

বিগত সময়ে রেলে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। আমরা এখন পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সংকট কেটে যাবে

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, উপদেষ্টা রেলপথ মন্ত্রণালয়

গত ৬ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে শহরের কলেজপাড়া লেভেলক্রসিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনায় ডাউন লাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশন এলাকার কাছে ২৩ আগস্ট সকালে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। এতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ঢাকামুখী ওই লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ২৪ আগস্ট রাজশাহীতে লাইনচ্যুত অবস্থায় একটি বগি রেখেই যাত্রা করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঈশ্বরদীর মধ্যে চলাচল করা সিক্স ডাউন (লোকল) ট্রেন। প্রায় চার ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে ট্রেনের বগিটি উদ্ধার করা হয়।

রেলের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকায় রেলপথে এসব সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সীতাকু-, মিরসরাই, ছাগলনাইয়া, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, লাকসাম, চাঁদপুর সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কসবা, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, ভৈরববাজার, নরসিংদী, টঙ্গী, ঢাকা সিটি করপোরেশন, কুলাউড়া, সিলেট সদর, ছাতক, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, জামালপুর সদর ও গৌরীপুর এলাকায় জটিলতা বেশি।

অন্যদিকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২৩ জেলায় সমস্যা বেশি। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় সংস্কারকাজ করতে হবে। এই পুরো অংশে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার রেললাইনের অবস্থা ভালো নয়।