Image description

ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের জন্য ত্রাণবাহী জাহাজ বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযানে উঠে পড়েছে ইসরায়েলি সেনারা। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) স্থানীয় সময় ভোর রাতে আলমা নামের একটি জাহাজে ইসরায়েলি সেনারা উঠে পড়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আই। জাহাজটি গাজাগামী নৌবহরের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী জাহাজ ছিল। এছাড়া আদারা নামে আরেকটি জাহাজে ইসরায়েলি সেনারা ওঠার পর সেটিতে থাকা অধিকারকর্মীদের তাদের মোবাইল ফোন পানিতে ফেলে দিতে দেখা গেছে।

গ্লোবাল সলিডারিটি ফ্লোটিলার (জিএসএফ) মুখপাত্র সাইফ আবুকেশক বলেন, মানবিক এই মিশন সরাসরি সাগরে ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে। খবর পেয়েছি, ইসরায়েলিরা দুই দিক থেকে আলমা নৌযানকে ঘিরে ফেলেছে। খুব দ্রুত তারা হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজে উঠেছে। সেখানে থাকা মানবাধিকারকর্মীদের আটক করার খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় শেয়ার করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ইসরায়েলি সৈন্য সুইডিশ প্রচারক গ্রেটা থানবার্গকে আটকের পর তার জিনিসপত্র হস্তান্তর করছে। ইতিমধ্যেইসুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজ আটক করা হয়েছে। জাহাজগুলোর যাত্রীদের ইসরায়েলি বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তার বন্ধুরা নিরাপদ এবং সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজা অভিমুখী আন্তর্জাতিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলাকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ।

এর আগে বুধবার ১২০ নটিক্যাল মাইল বা ২২২ কিলোমিটারের মধ্যে চলে আসার পর বহরের একজন কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ইসরায়েলের হুমকির কথা জানান। ওই কর্মী হলেন প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনালের সহসাধারণ সমন্বয়কারী ডেভিড অ্যাডলার। 

এক চিঠিতে তিনি ইসরায়েলের হামলার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, ইতোমধ্যে ইসরায়েলের কয়েকটি জাহাজ ফ্লোটিলাকে ঘিরে ধরেছিল। তারা ক্রুদের ভয় দেখায় এবং বহরের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে। এ সময় বহরের কর্মীদের জীবন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন অ্যাডলার। বুধবার বিবিসি ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।

তারও আগে সুমুদ ফ্লোটিলা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তু নেয় ইসরায়েল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানিয়েছে, তেলআবিব থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণের আশদোদ বন্দরে প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা আশদোদ ও আশপাশের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক থাকতেও নির্দেশ দেয়। 

গণমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলি নৌবাহিনীর এলিট স্পেশাল ফোর্স ইউনিট শায়েতেত-১৩ এর সদস্যরা ফ্লোটিলার জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেবে। বহরের কর্মীদের ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে তীরে নেওয়া হবে এবং তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হবে। আর যারা আদেশ মেনে কাজ করবে তাদের ফেরত পাঠানো হবে। কিছু জাহাজকে তীরে টেনে আনা হবে এবং অন্যগুলো সমুদ্রে ডুবিয়ে দেওয়া হতে পারে। ফলে বহরের ৪৯৭ যাত্রী জীবন শঙ্কায় রয়েছেন। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার নৌ-বহরকে থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ইতালি এবং গ্রীস ইসরায়েলকে কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, তারা ঘটনাবলী নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

ফুটেজে দেখা গেছে, ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুরস্কের নৌবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। ফ্লোটিলায় কমপক্ষে ৪৪টি দেশের কর্মী, সাংবাদিক এবং শিল্পী রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থানবার্গ ও নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি মান্ডলা ম্যান্ডেলা। 

ফ্লোটিলার সঙ্গে যুক্ত ছিল ইতালীয় নৌবাহিনীর ফ্রিগেট। কিন্তু ইতালীয় কর্মকর্তারা উপকূলরেখা থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল (২৭৮ কিমি) দূরত্বে আসামাত্রই তারা নৌবহর ত্যাগ করে।

গত ৩১ আগস্ট স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এখন পর্যন্ত গাজায় সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মিশন। এত ৪৪ জাহাজে ৪৯৭ জন যাত্রী রয়েছে। গত জুন ও জুলাই মাসে গাজায় জাহাজে করে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আরও দুটি প্রচেষ্টা আটকে দিয়েছিল ইসরায়েল।

https://twitter.com/i/status/1973479557622899030