
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম।
ক্যাম্পাস শাটডাউনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
বুধবার দুপুরে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল ও উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাত দিনের সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি (ক্লাশ-পরীক্ষা বন্ধ) অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।
সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনের লিচুতলায় চেয়ার পেতে বসেছেন কর্মবিরতিতে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন, একাডেমিক ভবনসহ সব শ্রেণিকক্ষ ও দপ্তরেই তালা ঝুলছে। ব্যস্ততম পরিবহণ ও টুকিটাকি চত্বরে মানুষের আনাগোনা কম। ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ ভ্রাম্যমাণ খাবার ও চায়ের দোকান বন্ধ আছে।+
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মঙ্গলবার অফিসার্স সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছে। বুধবার সকাল ১০টায় উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব সম্প্রতি স্থায়ীকরণকৃত সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।
বুধবার কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। এটিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে কর্মচারীরা নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বপরায়ন হবেন বলে উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, আমাদের আন্দোলন ও আলোচনা প্যারারাল। প্রশাসনের আমন্ত্রণে আলোচনায় বসেছিলাম। তারপর আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে গতকাল রাতে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সমাজের বসেছিলাম। আজ সহায়ক, সাধারণ ও পরিবহন কর্মচারীর প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসব। এরপরই একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন।
এদিকে ক্যাম্পাস শাটডাউনের প্রতিবাদে মানববন্ধনে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, টানা তৃতীয়বারের মতো পেছানো হয়েছে রাকসু নির্বাচন। সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পোষ্য কোটা আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার মানে আবারও ১৬ অক্টোবরের আগে পোষ্য কোটার মতো একটা মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে। আর সেই হালে বাতাস দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ষড়যন্ত্র আর মেনে নিবে না। রাকসু নির্বাচন যদি না হয় তাহলে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা রাকসু পেছানোর আন্দোলনের ফাঁদে পা দিয়েছিল, তাদের কাউকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষমা করবে না।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, এতকিছু হয়ে যাওয়ার পরেও তারা পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনতে চায়। কতিপয় শিক্ষকরা যারা নির্দিষ্ট একটা দলের প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা ছাত্রসংগঠন রাকসু নির্বাচনে হেরে যাবে এই ভয়ে তারা পোষ্য কোটা ইস্যু সামনে আনতে চায়। তারা মূলত শিক্ষার্থীদের সার্বিক অধিকার, একাডেমিক কার্যক্রম, পড়াশোনার পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিনষ্ট করতে চায়। তাদের আরেকটা এজেন্ডা হলো, রাকসু নির্বাচন পেছানোর অপরাজনীতি করে রাকসুকে বানচাল করা। এই ষড়যন্ত্র গত ৩৫ বছর ধরেই হয়ে আসছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা বলে দিতে চাই, সবকিছু মনে রাখা হবে।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে রাকসু নির্বাচনের স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আ. নূর বলেন, গরিব-দুঃখী-মেহনতি মানুষের টাকা প্রশাসনকে লিচুতলায় বসে থাকার জন্য দেওয়া হয় না। শিক্ষাঙ্গনে আমাদের শিক্ষার অধিকার হরণ করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে আমাদের ক্লাশরুম-লাইব্রেরি খুলে দেন এবং শিক্ষার অধিকার ফিরিয়ে দেন।