Image description
 

ভিসার ধরন এক না হওয়া এবং সমন্বয়হীনতার কারণে নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।

 

নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্তার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগী ও সমর্থকেরা এ হামলা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, এই নিন্দনীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে ওঠা বিধ্বংসী ও সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক স্পষ্ট ও মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই বিধ্বংসী রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করা হয়। একই সময় কটূক্তি করা হয় তাসনিম জারাকে।

জেএফকে বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকাল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সরকারের সফরসঙ্গী হওয়ার পরেও অরক্ষিত অবস্থায় বিমানবন্দরে হেনস্তার শিকার হওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সঙ্গে থাকা সরকারি কর্মকর্তারা বিশেষ প্রটোকলে বিমানবন্দর ত্যাগ করলেও সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতারা তা করতে পারেননি। প্রথম বিপত্তিটা ঘটেছে এখানেই।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

ঢাকা ও নিউইয়র্কের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেএফকে বিমানবন্দরে নামার পরপরই সফরসঙ্গী পাঁচ রাজনৈতিক নেতাকে আলাদা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রটোকলের কথা বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি। কারণ, ইমিগ্রেশন নিয়ম অনুযায়ী ওই পাঁচ রাজনৈতিক নেতার ভিসার যে ধরন, তাতে তারা বিশেষ কোনো প্রটোকল পান না। ফলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বের হওয়ার অনুমোদন দেয়নি। এতে তাদের সাধারণ যাত্রীদের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়েছে। এতে অনেকটা সময় লেগেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার নিয়ম রয়েছে। এ জন্য আগে থেকেই কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। তবে শর্ত থাকে যে কোনো ধরনের সংঘর্ষ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানো যাবে না। জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ দুটি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচির অনুমতি নিয়েছিল। একটি হচ্ছে জেএফকে বিমানবন্দরের সামনে, অন্যটি ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলের সামনে। এই হোটেলেই থাকছেন প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীরা।

নিউইয়র্ক থেকে সূত্রটি জানায়, বিমানবন্দরের বাইরে বিপুলসংখ্যক বিএনপি সমর্থকও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দলের মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যে বের হতে পারেননি, এ তথ্য সমর্থকদের জানানো হয়নি। ফলে তাদের অনেকেই স্থান ত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এরপর আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা বের হয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলে আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা তাদের হেনস্তা করেন এবং আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছুড়েন। এ ঘটনার পর যুবলীগ কর্মী মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী বিমানবন্দরের কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমে  বলেন, পরপর দুটি ডিম ছোড়া হয়। এনসিপি নেতা আখতার হোসেনের পিঠে ডিমগুলো লাগে। তিনি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে হেঁটে যান।