Image description
ড. ইউনূসের সফর

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার স্থানীয় সময় বিকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান। এদিকে ড. ইউনূসসহ প্রতিনিধিদলের নিউ ইয়র্কে আগমন ?উপলক্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের পক্ষে-বিপক্ষে স্লোগানে উত্তপ্ত ছিল জ্যাকসন হাইটস চত্বর। 
ওদিকে ড. ইউনূসের সফর ঘিরে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরে জড়ো হওয়ার ঘোষণা  দেন। 

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, স্থানীয় সময় রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে মিছিল করে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। একই এলাকায় প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রতিনিধিদলের আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উভয়পক্ষের স্লোগানে তৎক্ষণাৎ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। 

প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র পক্ষ থেকে ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও পরে দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মী সেখানে জড়ো হন। তারা ড. ইউনূসবিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করলে উভয়পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়, যা একপর্যায়ে হাতাহাতিতে গড়ায়। পরে নিউ ইয়র্ক পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন ২৬শে সেপ্টেম্বর। এ কারণে এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য নিউ ইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস এবং ফরেন সার্ভিসের কাছে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল অফিস। চিঠিতে তারা নোবেল বিজয়ী ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নিরাপত্তার শঙ্কা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে নিউ ইয়র্ক বিএনপি’র উত্তরের সেক্রেটারি ফয়েজ আহমেদ মানবজমিনকে জানান, জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং সফরসঙ্গী হিসেবে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরসহ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মিছিল-সমাবেশ করেছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। কেউ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা করলে জিয়ার সৈনিকরা শক্ত হাতে প্রতিহত করবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাসিব মামুন জানান, ড. ইউনূসের নিউ ইয়র্কের আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। এ ছাড়া ড. ইউনূসের নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তার হোটেলের সামনে প্রতিদিন বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হবে বলে জানান তিনি। 

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে গেছেন। রোববার দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে তাকে বহনকারী এমিরেটসের একটি ফ্লাইট হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যায়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সফরে রয়েছেন ৫ জন রাজনৈতিক নেতা। তারা হলেন- বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যোগ দেবেন জামায়াত নেতা ড. নাকিবুর রহমান।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র শাখা না থাকলেও বিভিন্ন নামে ঐক্যবদ্ধ আছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারাও সাধারণ প্রবাসীদের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরসহ প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। 

কনস্যুলেট অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কর্মসূচি চলাকালে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কূটনৈতিক প্রোটোকল মানা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলা অত্যাবশ্যক। একইসঙ্গে বলা হয়েছে, কনস্যুলেট প্রাঙ্গণ বা অফিস সংলগ্ন এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের সমাবেশ বা বিক্ষোভ কার্যক্রমকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, ড. ইউনূস ভাষণে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসন-পরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি তার ভাষণে উঠে আসতে পারে রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু, অর্থায়ন, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়।