
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। গতকাল রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নবীনবরণের প্রথম দিনেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক ক্লাসরুমে পরিচিত হওয়ার নামে নবীন শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অভিযোগ অনুযায়ী, ৫৩তম ব্যাচের প্রায় ১৮–২০ জন এবং ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তারা নবীন শিক্ষার্থীদের টানা আড়াই ঘণ্টা ধরে কক্ষে আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
একজন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, নবীনবরণ শেষে সিনিয়ররা আমাদের একটি কক্ষে ডেকে আনে। এসময় ৫৩তম ব্যাচের তানজিম হোসেন, মাহাথির আজমাইন, শুভ্র আচার্য, সামিউর রহমান সামি, রমজান, সালেহ আহমদ অনিক, রুয়াম নিয়াজ, তানভীর হোসেন, আমিনুলসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে তাদের কয়েকজন নারী সহপাঠী এবং ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী ম্যানার শেখানোর নামে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে দুইজন নারী শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ছেলেরা আতঙ্কিত হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্তদের মধ্যে তানজিম হোসেন, তানভীর হোসেন ও শুভ্র আচার্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
একজন নবীন শিক্ষার্থী জানান, কক্ষে শিক্ষক প্রবেশ করলে তারা বের হয়ে যায়। কিন্তু শিক্ষক চলে যাওয়ার পর পুনরায় ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করে। এছাড়া ঘটনাটি যেন কেউ বাইরে না জানানো হয় এজন্য বলা হয় আমাদের।
ভুক্তভোগীদের নবীন শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনিয়ররা জানিয়েছে—এ ধরনের আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংস্কৃতির’ অংশ, আর এসব বিষয়ে বিচার হবে না।
ভুক্তভোগী এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকদের বক্তব্য শেষ হওয়ার পর ৪–৫ জন সিনিয়র আমাদেরকে ডেকে দেড়টায় বিভাগে সবাইকে থাকতে বলেন। দেড়টার দিকে ১৫–২০ জন সিনিয়র এসে দরজা বন্ধ করে। সবাই উপস্থিত না থাকায় শ্রেণি প্রতিনিধিকে ধমক দেওয়া হয়। তারপর শুরু হয় গালিগালাজ ও তিরস্কার। আমাদের ছেলে বন্ধুদের দাঁড় করিয়ে ‘নেশাখোর’ বলে অপমান করা হয়। চুল কাটার ধরন নিয়েও কটাক্ষ করা হয়।
একপর্যায়ে এক শিক্ষক প্রবেশ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। কোনো হয়েছে কিনা ওই শিক্ষক জানতে চাইলে একজন নারী শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে কক্ষে উপস্থিত ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন সিনিয়র ঔ শিক্ষককে জানান—কিছু হয়নি। শিক্ষক চলে গেলে সিনিয়ররা আবারও ভয়ভীতি প্রদর্শন শুরু করে।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের বাবা-মায়ের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। ফুলহাতা শার্ট পরতে বলা হয়, জিন্স না পরার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে আমাদেরকে অপমান ও হুমকি দেওয়া হয়। আমরা তো ক্যাম্পাসে নতুন এসেছি, এমন পরিস্থিতির জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। বিশেষ করে মেয়েরা আতঙ্কে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও হুমকি দেন যেন কেউ এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ না করে।
জানা গেছে, পরবর্তীতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে কেউ পরিচয় প্রকাশে কিছু বলতে চায়নি। ভুক্তভোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
অভিযুক্ত একজন ৫২ ব্যাচের জাহিদ রাতুল। তিনি গত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান করেছিলেন এবং এজন্য ব্যাচ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। অভিযোগ বিষয়ে জাহিদ রাতুল বলেন, যে তথ্য ছড়ানো হয়েছে সেটা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন. আমি সেখানে ছিলামই না, ৫৪ ব্যাচের সাথে ৫৩ ব্যাচ কী করে সেটা আমার জানার ইস্যু না।
অভিযুক্তদের অন্যতম ৫৩তম ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি তানভীর হোসেন বলেন, এরকম কিছুই ঘটেনি। সবকিছু সমাধান হয়ে গেছে। এটাকে বাড়ানোর বা কমানোর কিছু নেই।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সজীব বালা বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত প্রত্যেকে এরকম কর্মকাণ্ড পূণরায় না করার জন্য লিখিত মুচলেখা দিয়েছে। আমরা অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী সবার সাথে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবো।