
সারাদেশে বিভিন্ন উপাসনালয়, প্রতিষ্ঠান ও মাজারে হামলার নেপথ্যে জড়িত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশের এসপি ও ওসিদের সতর্ক করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক যে উদ্দেশ্যেই হোক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মাজারে হামলার নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা না হলে পতিত আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগীরা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির ক্ষেত্রে নানা ষড়যন্ত্র করবে। মাজারে হামলা-ভাঙচুর, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা, রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে হেনস্তা একের পর এক এমন সব ঘটনায় নিজেদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা ঠিক করতে চাইলে পুলিশকে দিয়েই এদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও মাজারে হামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। প্রতিটি হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে এবং পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে দেশে অন্তত ১৬-১৭টি স্থানে বিভিন্ন মাজার ও খানকায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাজারে হামলা ও কবর থেকে লাশ তুলে আগুনে পোড়ানো হয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বের রাতে সিলেটের হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। গত ৯ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জ সদরের শ্যামপুর গ্রামে মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে পৃথক চারটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই দিন রাতে হোমনা থানার এসআই তাপস কুমার সরকার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হলেও তাদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ সব হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশ নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সারাদেশে বিভিন্ন উপাসনালয়, প্রতিষ্ঠান ও মাজারে হামলার ঘটনায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও ভারত সুযোগ নিচ্ছে এমন মন্তব্য করে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতির এই ক্রান্তিকালে বিশেষত রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের কঠিন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মাজারে হামলার ঘটনার সুযোগ নিচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রভু আধিপত্যবাদী ভারত। এসব হামলার কারণে তারা এদেশের আলেম-ওলামা ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, মাজারকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও শরিয়তবিরোধী অপকর্ম বা সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড- চললে সেক্ষেত্রে প্রশাসনের সহায়তায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পথ বেছে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে হামলা করা, সহিংসতা ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি কোনোভাবেই হামলাকারী নাগরিকদের দায়িত্বশীল মানসিকতার পরিচয় দেয় না। আমরা এ ধরনের হামলা সমর্থন করি না। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত।