Image description
 

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে সদর বাজারসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানি বেড়ে পেয়ে নিচু এলাকায় ঢুকতে শুরু করেছে। লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে স্রোতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশু শিক্ষার্থীর। নিখোঁজ রয়েছে এক কিশোর।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তীব্র স্রোতে বাঁধ ভেঙে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

 এতে ঝিনাইগাতী উপজেলার খৈলকুড়া বাজার এলাকার অন্তত ১০-১২টি ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। বিদ্যুতের খুঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভেসে গেছে। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মহারশি নদী ঝিনাইগাতী ব্রিজপাড় এলাকায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে এবং চেল্লাখালী নদী নালিতাবাড়ীর বাতকুচি স্টেশনে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে ঝিনাইগাতী উপজেলার পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীতে পানি বেড়েছে। মহরশি নদীর পানি ঝিনাইগাতী বাজারের ব্রিজপাড় এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে যাচ্ছে। পানির তোড়ে খৈলাকুড়া এলাকায় নদীর বাঁধের একাংশ ভেঙে গেছে। ওই এলাকার মহিলা মাদ্রাসা এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। স্রোতে পূর্ব খৈলকুড়া গ্রামের সাত্তার মিয়া, বারেক মিয়া, বাচ্চু মিয়া, রহিম মিয়া, আমিনুলের বাড়ি ভেঙে গেছে। একই দিন বিকেলে চতল, বনগাঁওসহ কয়েক স্থানে বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ১৫-২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

দুপুরে নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীতে ঢলের পানিতে ভেসে আসা লাকড়ি ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হুমায়ুন (১০) নামে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরে তার লাশ উদ্ধার করেছে দমকলকর্মীরা। সে পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। বুরুঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমায়ুন। এ ছাড়া ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীতে লাকড়ি ধরতে নেমে স্রোতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন ইসমাইল (১৮) নামে এক যুবক। নিখোঁজ ইসমাইলের বাড়ি ডাকাবর গ্রামে। জামালপুর ফায়ার সার্ভিসের সদস্য আজাহারুল ইসলাম বলেন, রাত একটি ঝোড়া থেকে হুমায়ুনের লাশ উদ্ধার করে তার স্বজনরা। নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নদীতে ভীষণ স্রোত। তাই উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হচ্ছে।

 
 

এদিকে নদীর পানি উপচে ঝিনাইগাতী বাজারে ঢুকে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। যে কোনো সময় রাংটিয়া দক্ষিণপাড়া ও শালচূড়াতে পানি ঢুকতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।কাংশা ইউনিয়নের কারাগাঁও ও আয়নাপুর গ্রামে সোমেশ্বরী নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে কারাগাঁও বটতলা সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর খালভাঙ্গা এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

সেখানেও ১৫ গ্রামের মানুষের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি। ৯৯ শতাংশ জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলায় কিছু রোপা আমন ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে।ঝিনাইগাতী সদর ইউপি সদস্য জাহিদুল হক মনির জানান, মহরশি নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে খৈলাকুড়া এলাকায় চার-পাঁচটি বসতঘর ভেসে গেছে। মৎস্য খামার ও কয়েকশ একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। 


ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১১৩ হেক্টর রোপা আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে গেলে আবাদের তেমন ক্ষতি হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল কবীর রাসেল জানান, মহারশি নদীতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে আগেই। এ ছাড়া দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ব্রিজপাড় এলাকায় পানির তোড়ে একটি সড়ক ভেঙে গেছে। তাঁর ভাষ্য, বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাময়িকভাবে বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।