
যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ধ্বংসাত্মক ক্রুজ মিসাইল উন্মোচন করে তাইওয়ান এখন নতুন সামরিক শক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মার্কিন মদদে তাইওয়ানের এই প্রস্তুতি কেবল বেইজিংকেই নয়, বরং গোটা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। প্রশ্ন উঠছে, এটি কি চীনের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার সংকেত?
চীনের তীব্র হুমকির মধ্যেই তাইওয়ান এই সামরিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় দেশটি প্রথমবারের মতো উন্মোচন করেছে একটি ধ্বংসাত্মক ক্রুজ মিসাইল। এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজনাপূর্ণ করে তুলেছে এবং প্রশ্ন উঠছে: মার্কিন সহায়তায় তাইওয়ান কি যুদ্ধের পথে হাঁটছে?
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও নতুন মিসাইল উন্মোচন
চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের উত্তেজনা এবার প্রকাশ্যে এসেছে তাইওয়ানের মিসাইল প্রদর্শনের মাধ্যমে। পেছন থেকে তাইওয়ানকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর ভূমিকা এখন আর আড়ালে রাখা সম্ভব নয়। চীনের সামরিক হুমকি মোকাবিলায় তাইওয়ান সম্প্রতি একটি নতুন প্রোটোটাইপ ক্রুজ মিসাইল উন্মোচন করেছে, যা আমেরিকার 'অ্যান্ড্রিল ইন্ডাস্ট্রিজ'-এর সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছে। আগামী বছর তাইওয়ানে এই মিসাইলের উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা।
তাইওয়ানের শীর্ষ সরকারি অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া দ্বীপটির সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে তাদের নতুন স্বল্পমূল্যের স্বায়ত্তশাসিত ক্রুজ মিসাইল প্রদর্শন করেছে। তাইওয়ানের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে। একই সঙ্গে উন্মোচন করা হয়েছে নতুন এক ক্রুজ মিসাইল, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাধীন 'ব্যারাকুডা ৫০০' মডেলের আদলে তৈরি। এটি যুদ্ধবিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য এবং সমুদ্র ও স্থল উভয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, প্রতিটি মিসাইল উৎপাদনে খরচ হবে প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার ডলার এবং উৎপাদন এক বছরের মধ্যেই শুরু হবে।
এছাড়াও, নিজস্ব নকশার পানির নিচের ড্রোন ও মোবাইল মাইন প্রোটোটাইপও প্রদর্শন করা হয়েছে, যা অ্যান্ড্রিলের সঙ্গে মিলে বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
চীনের কড়া প্রতিক্রিয়া ও আঞ্চলিক ঝুঁকি
তাইওয়ানের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক ও দীর্ঘদিনের অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহে বিলম্ব দেখা দিয়েছে।
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কড়া বার্তায় জানিয়েছেন, "আমরা কখনোই তাইওয়ানের মার্কিন ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না এবং যেকোনো বহিরাগত সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে প্রস্তুত।" তিনি ট্রাম্পকে সরাসরি সতর্ক করে বলেন, "তাইওয়ানকে ব্যবহার করে চীনকে আটকে রাখা দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।"
বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ানের সামরিক আধুনিকায়ন এবং বেইজিংয়ের কঠোর অবস্থান—দুটোই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় বড় বাধা হয়ে উঠছে। তারা সতর্ক করেছেন যে, কার্যকর কূটনৈতিক আলোচনার বাইরে এই উত্তেজনা কমানোর কোনো উপায় নেই। অন্যথায়, ভুল বোঝাবুঝি বা ভুল পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলতে পারে। শেষ পর্যন্ত চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাইওয়ান সংকট কোন দিকে যাবে, তা এখন কেবল সময়ই বলে দেবে।